২৫ শে ফেব্রুয়ারী : কলংকময় যে দিনটি হয়তো আমরা ভুলে যাবো

জাতি হিসেবে আমরা অনেক অদ্ভুত আমরা দ্রুত সবকিছু ভুলে যেতে পারি,সেই স্বভাবের কারণেই হোক অথবা অন্য কারণেই হোক ২৫ শে ফেব্রুয়ারি তারিখটা মনে হয় অনেকেই ভূলে গেছে ।

 আজ ২৪ ই ফেব্রুয়ারি একদিন পরেই ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১ সালের পর বাঙ্গালী জাতির সবচেয়ে কলংকময় অধ্যায় ।এই দিনে বিডিআরের কিছু সদস্যের বিদ্রোহ এবং তাতে সরকার ও বিরোধীদল সংশ্লিষ্ট রাজনীতিবিদদের ষড়যন্ত্রের বলি হয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাহসী দেশপ্রেমিক ৫৭ জন অফিসার সহ মোট ৭৩ জন শহীদ হয় ।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি,২৫ শে ফেব্রুয়ারী সকালে যখন আমি টিভি অন করি তখন সকল চ্যানেলেই দেখি বিদ্রোহ নিয়ে ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে তবে আমার মনে পড়ছে আমি প্রথম যে নিউজটি দেখেছিলাম তা হলো "রাইফেলস মার্কেটের ভিতরে বিডিআর অবস্হায় নিয়েছে"
তার কিছুক্ষণ পরেই বিডিয়ারের কিছু জওয়ান টিভি মিডিয়াকে জানালো তারা বিদ্রোহ করেছে এবং বিদ্রোহী জওয়ানরা তাদের  বিদ্রোহের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে সেনাবাহিণীর  অফিসারদের বিরুদ্ধে নানা ক্ষোভ জানাচ্ছে কিন্তু ভেতরে যে তারা কত বড় গণহত্যা চালিয়েছে তা তারা বেমালুম চেপে গেলো ।


এরই মাঝে আমরা আমাদের চিরাচিরায়িত স্বভাবে ফিরে গেলাম শুধুমাত্ত বিডিআরের কথা শুনেই দেশের মানুষও আর্মির বিরুদ্ধে ফুসে উঠলো কিছু ব্লগার আর্মির বিরুদ্ধে পোস্ট দিতে থাকলো,কিছু মানুষ দেখা গেলো বিডিআরের সমর্থনে পিলখানার গেটে মিছিল করতে থাকলো ,টিভি মিডিয়াগুলোও একতরফা বিডিআরের পক্ষে ব্রেকিং নিউজ দিতে থাকলো আমার মনে হলো দেশে উৎসব শুরু হয়ে গেছে এবার সেনাবাহিনী মুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়বে এদেশের মানুষ ।এরই মাঝে দেশের বিভিন্ন স্হানে বিডিআর সেক্টরেও বিদ্রোহ শুরু হলো ,সারাদেশে গৃহযুদ্ধের আশংকা দেখা  দিলো ।

আমি টিভির সামনেই বসে রইলাম বিকেল পযর্ন্ত কিন্তু কোন কুল কিনারা করতে পারলাম না যে আসলে  কি হচ্ছে তবে এতটুকু প্রথম থেকেই নিশ্চিত ছিলাম বিদ্রোহ করার মতো কিছুই হয়নি তবে যুদ্ধের দামামা আমার মনেও বেজে উঠেছিলো যে আর্মি পিলখানাতে এ্যাটাক করে ১০ মিনিটেই সব ক্লিয়ার করে দিবে কিন্তু হায় আমার মনে যে দামামা বেজে উঠেছিলো তা  আমাদের সরকার বা সেনাপ্রধানের মনে জেগে উঠেনি ।

২৫ শে ফেব্রুয়ারী রাত কাটলো অস্হির ভাবে কি হচ্ছে কি হচ্ছে এরই মাঝে সরকারের কিছু মন্ত্রী পিলখানা পরিদর্শন করেছে বিডিআরকে আত্নসমপর্ন করানোর চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুতেই কিছুই হলোনা ,প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিদ্রোহীদের একটি গ্রুপও দেখা করে কিন্তু অগ্রগতি কিছুই হলোনা ।

২৬শে ফেব্রুয়ারি আমি আমার ফ্যামিলির সাথে চলে গেলাম কক্সবাজার কিন্তু কিসের অবকাশ যাপন আমার মাথায় সারাক্ষণ শুধু বিডিআর বিদ্রোহ । গাড়িতে রেডিও অন করে প্রতি মুহুর্তে আপডেট শুনতে ছিলাম হোটেলে উঠে টিভিতে আপডেট দেখতেছিলাম ।

অবশেষে ২৬শে ফেব্রুয়ারি দুপুরের দিকে কয়েকজন সেনা কর্মকতা জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে অবশেষে সরকারের ঘুম ভাঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষনে বিডিআর সদস্যদের হুশিয়ারী দেওয়ার পর ধীরে ধীরে পরিস্হিতি শান্ত হয়ে আসে বিদ্রোহীরা আত্নসমর্পন করে এবং পুলিশ পিলখানার ভিতরে প্রবেশ করে ।


পুলিশ,র‍্যাব আর সেনাবাহিনী পিলখানাতে প্রবেশ করার পর  ৭১ সালের পর দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কলংময় গণহত্যা প্রকাশ হতে থাকে । পিলখানার বিভিন্ন নর্দমায় ভেসে উঠে সেনাকর্মকতাদের লাশ ।মাটি খুড়ে পাওয়া যায় গণকরব,  সেনা কর্মকর্তাদের গলিশ খন্ডিত পচাগলা লাশ পাওয়া যায় বিভিন্ন নর্দমায় ।
স্বজনের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠে পিলখানার আকাশ বাতাশ ।সন্তানের আর্তনাদ বাবার জন্য, স্ত্রীর আর্তনাদ স্বামীর জন্য, মায়ের আর্তনাদ সন্তানের জন্য চারদিকে শুধুই হারানোর আর্তনাদ।গলিত আর ক্ষত বিক্ষত লাশ দেখে নিজের চোখের পানি আমি নিজেই ধরে রাখতে পারিনি ।


একে একে ৫৭ জন অফিসারের শহিদী  লাশসহ মোট ৭৩টি লাশ উদ্ধার করা হয় পিলখানা থেকে 

পরিবর্তীতে জানা যায় বিদ্রোহের ২৫ ফেব্র”য়ারি দরবার শুরু হলে সিপাহি মইনুদ্দীন প্রথমে মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের দিকে অস্ত্র তাক করলে উপস্থিত কর্মকর্তারা তাকে নিরস্ত্র করে। এর পরপরই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বিদ্রোহীরা।  বিদ্রোহীদের আরেকটি অংশ এর আগেই অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে। হলের ভেতর একজন ‘জাগো’ বললেই শুরু হয়ে যায় গোলাগুলি। এরপর বিদ্রোহীরা পাইকারিহারে হত্যাকাণ্ড ও লুটপাট চালায়।

ব্যাক্তিগত মতামত 


  • বিদ্রোহের প্রথম দিকে আমাদের দেশের মিডিয়া এক তরফাভাবে সংবাদ পরিবেশন করেছে এবং শেষের দিকে বার বার অফিসারদের গলিত লাশগুলো মিডিয়াতে প্রদর্শন করেছে যা আমার একেবারেই পছন্দ হয়নি ।এতবড় বিদ্রোহের ঘটনা যেহেতু ঘটে গেছে তাই তথ্য পরিবেশেনের বেলায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকার দরকার ছিলো ,বিদ্রোহীরা যদি টিভি মিডিয়ার মাধ্যমে বাইরের সব খবরই জেনে যায় তাহলে বিদ্রোহ দমন আমরা করবো কি করে??
  • আমাদের এত বড় চৌকষ সেনাবাহিনী থাকার ফলেও যদি দেশের সন্তানেরা ৩৩ ঘন্টা টানা জিম্মি থাকে তাহলে সে সেনাবাহিনী আমাদের দরকার নেই ,এর পিছনে কে দায়ী তা খুজে বের করার দরকার ।
  • আমাদের আছে সেনাবাহিনী র‍্যাব পুলিশ তারপরেও কি করে পিলখানা থেকে বিদ্রোহীরা সহজে পালিয়ে যায় ? একটা পিলখানা যদি আমরা ঘেরাও করে রাখতে না পারি তবে এই বাহিনী রেখে কি লাভ ?
  • যারা আড়াল থেকে কলকাটি নাড়াচাড়া করেছেন তাদেরও বিচার হবে ইনশাল্লাহ ।


আমি চিৎকার করে কাদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার 
বুকের ব্যাথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার 

[পুরো লেখাটা আমার ব্যক্তিগত মতামতের ভিত্তিতে লিখেছি ,আমি কখনোই আমার মতের সাথে সহমত প্রকাশ করার জন্য কাউকে উৎসাহিত করিনা]

1 comments:

শূণ্য said...

এ ঘটনার অনেক অনেক খানি তথ্য আমি জানি, কারন আমার বাবা একজন সেনা কর্মকর্তা। আল্লাহার কাছে হাজারো শুকরিয়া করি আমার বাবা ওখানে ছিলেন না।

আপনার পুড়া লেখাটা পড়তে পড়তে চোখে পানি এসে গেছে। কি অবস্থা আমাদের দেশের। :( :(

সাধারন ক্ষমা নামে ২ টি শব্দই কত কিছু করতে পারে তা দেখলাম আমরা।

যেদিন আমাদের এই বস্তাপচা রাজনীতি বন্ধ হবে সেদিনই আমরা কিছু করতে পারবো। এর আগে না।

Post a Comment

লেখাটি শেয়ার করুন