পালংখিয়াং ও থানকোয়াইন ঝর্না দেখতে বান্দরবনে

গত অক্টোবর ২৭-২৮ তারিখ ঘুরে আসলাম বান্দরবনেের আরও সুন্দর দুটি ঝর্না। থানকোয়াইন ও পালংখিয়াং ঝর্না । আজকের লেখায় ঝর্ণাগুলোতে যাবার বিস্তারিত গাইডলাইন প্রকাশ করবো। আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে।

 


                                    পালংখিয়াং ঝর্ণার সামনে আমি ,হ্যামক ঝুলিয়েছিলাম।

থানকোয়াইন ও পালংখিয়াং ঝর্না হলো বান্দরবন জেলার আলীকদম উপজেলায়। ঢাকা থেকে সরাসরি শ্যামলী হানিফ সৌদিয়া বাস যায় । রাতে ছাড়ে আপনাকে সরাসরি সকাল ৬-৭টারদিকে নামিয়ে দিবে আলীকদমে। আলীকদম নামার পর আপনার প্রথম কাজ হলো গাইড অফিস আছে সেখান থেকে গাইড নেয়া । বাস স্ট্যান্ডের সাথেই গাইড অফিস যেকাউকে বললেই দেখিয়ে দিবে।

গাইড অফিসে কাজ শেষ করে গাইড আপনাদের লোকাল থানায় নিয়ে যাবে অনুমতি নেবার জন্য ,অনুমতি নিয়ে অটোতে করে চলে আসবেন আমতলী নৌকা ঘাট এখান থেকে টোয়াইন খাল হয়ে আপনার নৌকা যাত্রা শুরু। টোয়াইন খান চমৎকার একটা খাল যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই । টোয়াইন খাল হয়ে খালের পানির উপরে নির্ভর করে দেড় থেকে দুই ঘন্টা পর আপনি পৌছাবেন দুসরি বাজার ,এখানকার আর্মিক্যাম্প থেকে আপনাকে নিতে হবে অনুমতি । এনআইডি কপির ফটোকপি জমা দিয়ে নাম ধাম সব লিখে আপনাকে অনুমতি নিতে হবে। এসব বিষয়ে গাইড আপনাকে হেল্প করবে ডোন্ট ওরি ।

যাই হোক দুসরিবাজার থেকে অনুমতি নিয়ে যদি খালে পানি ভালো থাকে আপনাকে নৌকা আরও ২০ মিনিটের মতো সামনে এগিয়ে দিয়ে আসবে আর যদি পানি না থাকে তাহলে এখান থেকেই ট্রেকিং শুরু করতে হবে আপনাকে। দুসরি বাজার থেকে আনুমানিক দেড় ঘন্টা হাটলে পাবেন থানকোয়াইন ঝর্না । মুলত এই রাস্তাটা আপ ডাউন নেই বললেই চলে সমতলেই হাটবেন তাই ঝামেলা কম ও দ্রুত পৌছাতে পারবেন।


থান কোয়াইন ঝর্ণাতে বর্ষায় পানি ভালো পাবেন নরমাল সময়ে পানি কম থাকে ,ঝর্ণার পাশেও থাকার ব্যবস্থা আছে চাইলে এখানেও রাতকাটাতে পারেন।

থানকোয়াইন ঝর্ণার ঠিক উপরেই হাজিরাম পাড়া,এখান থেকেই হাটা শুরু হয় ,একদম খাড়া এটা কোন সমতল বা ডাউন নেই একদম খাড়া উঠতে হবে হাজিরাম পাড়া ,এই রুটের সবচেয়ে কঠিন ট্রেকিং এই অংশটাই । এক থেকে দেড় ঘন্টা খাড়া উঠার পর পাবেন হাজিরাম পাড়া। হাজিরাম পাড়াতে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় তাই কোন কমিনিকেশন এর প্রয়োজন হলে সেরে নিতে পারেন এর পর আর কোন নেটওয়ার্ক পাবেন না ।

হাজিরাম পাড়াতো উঠলেন কিন্তু এখানেই শেষ নয় এবার নামতে হবে কারণ নীচে হলো সুন্দর পালংখিয়াং ঝর্না। হাজিরাম পাড়ায় কিছুটা রেস্ট নিয়ে নীচে নামা শুরু করতে পারেন নীচে গিয়ে নামবেন সোজা টোয়াইন খালে ,টোয়াইন খাল চমৎকার জায়গা পাথরের মাঝে পানির স্রোত টোয়াইন খালকে সবচেয়ে সুন্দর খাল মনে হবে আপনার। টোয়াইন খাল ধরে আনুমানিক ১ থেকে দেড় ঘন্টা হাটার পর পালংখিয়াং  গিয়ে পৌছাবেন ।

পালংখিয়ানে ঝর্ণার ঠিক সাথেই থাকার ঘর আছে আবার নীচের দিকেও ঘর আছে ঝর্ণার সাথের গুলোতে থাকার ট্রাই করবেন তাহলে পূর্ণ ফিল পাবেন। বেশি ভিড়ের সময় গেলে পালংখিয়ারের সাথের ঘরগুলো নাও পেতে পারেন।

যাই হোক পালং খিয়ানে একসাথেই তিনটা স্টেপ যার কারণে পুরোটা মিলে জোশ একটা পরিবেশ তৈরি হয় । গোসল করুন ঝর্ণাগুলোকে ফিল করুন ইচ্ছামত। ঝর্ণার শব্দে ঘুমাবেন আর ঘুম ভাঙ্গবে সেটা ভিন্ন এক পরিবেশ ।

এরপর দিনের প্ল্যান একেকজন একেকরকম করে আমাদের সময় কম ছিলো তাই আমরা এরপরদিন ফিরে আসি আর আপনার হাতে সময় থাকলে আশে পাশে আরও কিছু ঝর্ণা লাদমেরাখ,জামরুম.ক্রাতং এগুলো দেখতে পারেন পালংখিয়ান থেকে এগুলো দেখে আসতে সব মিলাই ৫-৬ ঘন্টার মতো আপনার লাগবে এরপর পালংখিয়ানে এসে রাতে থাকবেন। আমরা এগুলোতে যাইনাই।

তো আমরা এরপরদিন ভোরে উঠে পালংখিয়ানে ইচ্ছামত গোসল করে ছবি তুলে ফেরার পথ ধরি আসার পথে টোয়াইন খালের যেখানেই সুন্দর জায়গা পেয়েছি ইচ্ছামত গোসল করে মন ভরিয়ে নিয়েছি।

যেভাবে গিয়েছি সেইম টু সেইম পথে আবার ফিরে এসেছি । আমরা পালং খিয়াং থেকে বের হয়েছি সকাল সাড়ে দশটায় আর দুসরি বাজার আর্মি ক্যাম্পে বিকাল সাড়ে চারটায় এসেছি তারপর নৌকা করে যেহেতু ডাউন স্ট্রিমে আসবে তাই দ্রুত সময়ে সাড়ে ৫টার মধ্যে আমতলী ঘাটে চলে আসতে পেরেছি ।। সাধারণত আর্মি ক্যাম্প ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই সময়ের মধ্যে রিপোর্ট করতে হয় । আবারধরনের দিন বড় সন্ধ্যা হয় ৭টায় তখন হয়তো ৬টায় লাস্ট টাইম । এগুলো গাইড ভালো বলতে পারবেন আপনাকে । 

আর ট্রেকিং এর খাবার কিন্তু গাইডই রান্না করবে ,আপনাকে শুধু কি খাবেন তার বাজার করে দিতে হবে আলীকদম থেকে বাকী সব গাইড রান্না করবে ওখানে গিয়ে । এজন্য গাইডকে আলাদা কোন চার্জ দিতে হবেনা।


সো বুঝে গেছেন এখানে প্লান দুইভাবে করা যায় :

১ রাত থাকবেন তাহলে পালং খিয়াও ও থানকোয়াইন ঝর্না সাথে টোয়াইন খালতো আছেই।

২ রাত থাকবেন তাহলে পালংখিয়াং /থানকোয়াইন সাথে লাদমেরাখ,জামরুম.ক্রাতং ।

আশা করি ক্লিয়ার ,আপনার সময় কতটুকু আছে তার উপরে প্ল্যান করে ফেলতে পারেন। 


খরচ কেমন ? 

-ঢাকা টু বান্দরবন ১১০০ করে টিকেট ওয়ান ওয়ে

-গাইড পার ডে ১৫০০ + তার খাওয়া দাওয়া সহ নৌকা ভাড়া আপনার

-নৌকা ভাড়া ডিপেন্ড করে লোক কতজন তার উপরে তবে এগুলো ফিক্সড করা তাই কোন গাই্ড বেশি চাওয়ার সুযোগ নেই । 

-থাকা ২০০ করে প্রতিজন 


এগুলোই মেইন খরচ এর বাইরে টুকটাক নাস্তা গাইড অফিসে ৩০০ টাকা ফি এমন ছোট খাট কিছু খরচ তো আছেই।

লেখাটি শেয়ার করুন