হলুদ সাংবাদিকতার ইতিহাস ও হলুদ রংয়ের সাথে সম্পর্ক

যদি একটা সংবাদকে আমাদের কাছে পক্ষপাতমুলক ,অতিরন্জিত বা মিথ্যা মনে হয় তবে আমরা বলি এটা হলুদ সাংবাদিকতা। হলুদ সাংবাদিকতার মাধ্যমে একটা খবরের নিরপক্ষতা নষ্ট করে দেয়া হয় বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে । কিন্তু এ হলুদ সাংবাদিকতা কোথা থেকে আসলো কারাই বা প্রথম এটা শুরু করলো বা এটার সাথে হলুদ রংয়ের কি সম্পর্কে এ নিয়েও রয়েছে বেশ মজার ইতিহাস । চলুন আজকে এ ইতিহাসটাই জানবো আমরা

সাংবাদিকতায় ইয়েলো জার্নালিজম বা হলুদ সাংবাদিকতা শব্দটি এসেছে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে। দুই বিখ্যাত সাংবাদিক জোসেফ পুলিৎজার ও উইলিয়াম হার্স্টের এক অশুভ প্রতিযোগিতার ফসল আজকের এই হলুদ সাংবাদিকতা।

ইতিহাস ঘেটে জানা যায় বিখ্যাত সাংবাদিক জোসেফ পুলিৎজার ১৮৮৩ সালে নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড পত্রিকাটি কিনে নেন তিনি প্রথম থেকেই চাচ্ছিলেন সবার থেকে ব্যাতিক্রম হতে তাই তিনি চটকদার আকর্ষণীয় সংবাদ শিরোনাম দেয়া শুরু করেন পত্রিকার দাম কমিয়ে মাত্র ২ সেন্টে ৮-১০ পাতার পত্রিকা দেয়া শুরু করেন অপরাধ বিষয়ক বেশি সংবাদ ছাপানো শুরু করেন । এতে তার পত্রিকা অল্প সময়ে সর্বাধিক বিক্রিত পত্রিকায় পরিণত হয় ।

অপরদিকে উইলিয়াম হার্স্ট সান ফ্র্যান্সিসকোতে এক্সামিনার পত্রিকাটির দায়িত্ব নেন যে বহু আগে থেকেই পুলিৎজারের সাফল্যের প্রতি নজর রেখে আসছিলেন তাই সে পত্রিকার দায়িত্ব নিয়েই পুলিৎজারের ব্যবহার করা সব ধরনের কৌশল তার পত্রিকাতে কাজে লাগান বাড়িয়ে দেন অপরাধ বিষয়ক খবর ও চমকপ্রদ খবর সত্য মিথ্যা মিশিয়ে অতিরন্জিত করে খবর প্রকাশ করে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়ে যান। কিছুদিন পর উইলিয়াম হার্স্ট সান ফ্রান্সিসকো ছেড়ে নিউইয়র্কে চলে আসেন, এসে হার্স্ট কিনে নিলেন নিউ ইয়র্ক জার্নাল নামে একটি পত্রিকা, এটি আর কারোর নয়, একেবারে পুলিৎজারের ভাইয়ের পত্রিকা ছিলো। এ বিষয়টিকে পুলিৎজার ভালোভাবে নেননি সে এতে ক্ষিপ্ত ছিলো।

পুলিৎজার

এবার নিউইয়র্কে দুই সাংবাদিক পুলিৎজার আর হাস্টের শুরু হলো সংবাদপত্র নিয়ে এক যুদ্ধ , হাস্ট পুলিৎজারের পত্রিকার অর্ধেক দাম রাখলেন তার পত্রিকার মানে ১ সেন্ট । হু হু করে বাড়তে লাগলো হার্স্টের পত্রিকার জনপ্রিয়তা । প্রথমে হাস্টকে পাত্তা না দিলেও দেখা গেলো তার পত্রিকার পাঠক হাস্টের পত্রিকায় চলে যাচ্ছে তখন পুলিৎজার তার পত্রিকার দাম আরও কমিয়ে মাত্র ১ পেনি রাখে।

এবার হাস্ট দিলেন উল্টো চাল, সে বেশি বেতনের লোভ দেখিয়ে পুলিৎজারের পত্রিকার সাংবাদিকদের নিজের পত্রিকায় নিয়ে আশা শুরু করলেন।

এ সময় উভয় পত্রিকাই নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে ভিত্তিহীন, মিথ্যা, অর্ধসত্য, ব্যক্তিগত কেলেংকারিমূলক, অশ্নীল,কাদাছোড়াছোড়িমুলক খবর ছাপা শুরু করলো ।

হাস্ট

এভাবেই জোসেফ পুলিৎজার ও উইলিয়াম হার্স্ট দু’জনেই হলুদ সাংবাদিকতার দায়ে অভিযুক্ত এবং ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে রইলেন ।

হলুদ সাংবাদিকতা ছাড়াও সংবাদপত্রে নতুনত্ব আনার জন্যও তাদের অবদান অনেকে স্মরণ করে।

তবে হলুদ সাংবাদিকতার দায়টা সবচেয়ে বেশি এসে পড়ে পুলিৎজারের উপরে সেই সর্বপ্রথম এটা শুরু করেছিলো, পুলিৎজার মারা যাবার পর থেকে সারা বিশ্বের বিভিন্ন সাংবাদিকদের তাদের দক্ষতার উপরে পুলিৎজার পুরষ্কার প্রদান করা হয়।এই পুরষ্কারটি সাংবাদিকদের কাছে অত্যন্ত মুল্যবাদ ও দামি পুরষ্কার হিসেবে বিবেচিত হয়।

এবার আসি এর সাথে হলুদ রংয়ের কি সম্পর্ক, কেনই বা হলুদ সাংবাদিকতা বলা হয় ?

পুলিৎজারের নিউইয়র্ক ওয়াল্ড পত্রিকার এক কার্টুনিস্ট ছিলেন সে একটি কাটুর্ন আঁকতো যাকে বলা হতো ইয়োলো কিড। এই ইয়েলো কিডের জন্যে পুলিৎজারের পত্রিকা বেশ জনপ্রিয় ছিলো।

সেই বিখ্যাত ইয়োলো কিড কার্টুন

পরবর্তীতে হার্স্ট ওই কাট্যুনিস্টকে মোটা অংকের বেতন দিয়ে নিয়ে আসেন নিজের পত্রিকার জন্য এবং হাস্ট তার পত্রিকায় সেই একই ইয়েলো কিড চরিত্রের কার্টুন ছাপাতে থাকেন।
পুলিৎজর তখন অন্য এক কার্টুনিস্ট দিয়ে সেই ইয়েলো কিড চরিত্রটি আঁকিয়ে নিজের পত্রিকায় ছাপাতে থাকেন। এভাবে দুইজনের পত্রিকায়ই ইয়োলো কিড কার্টুনটি ছাপতে থাকে ।

এভাবে দুইজনের মধ্যের দ্বন্দ বাড়তে থাকে। আর সেই ইয়োলো কিড কার্টুন থেকে সাংবাদিকতার এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার নাম দেয়া হয় ইয়েলো জার্নালিজম বা হলুদ সাংবাদিকতা।

আশা করি লেখাটি আপনাদের ভালো লাগবে ধন্যবাদ

বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পেট্রোল পাম্প

বিশ্বের সবচেয়েই উঁচু পেট্রোল পাম্প রয়েছে ভারতে । ভারতের হিমাচল প্রদেশের স্পিতি ভ্যালীর কাজাতে এটি অবস্থিত। এটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৩৭৪০ মিটার মানে ১২২৭০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত।এই পেট্রোলপাম্পটি মুলত স্পিতি ভ্যালীর একমাত্র পেট্রোল পাম্প ।


 

কাজা পেট্রোল পাম্প বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পেট্রোল পাম্প

ওই এলাকা/ভ্যালির একটি একমাত্র পেট্রোল পাম্প।ট্যুরিস্ট সিজনে প্রতিটি গাড়ীর ধরণ অনুযায়ী কতটুকু তেল দেওয়া হবে তা নির্ধারিত থাকে তাই চাইলেই কেউ অতিরিক্ত তেল নিতে পারেনা।

এই পেট্রোল পাম্পটির সবচয়ে নিকটবর্তী পেট্রোল পাম্পটি কিন্নরের পওয়ারীতে এবং মানালীর কুলুতে । দুইটি স্টেশনই এখান থেকে প্রায় ২০০ কিমি দুরে ।

তবে নানা সময়ে বিশেষ করে বর্ষা ও ভারী স্নোফল হলে এখানে পেট্রোলের শর্টেজ দেখা দেয় যেহেতু পাহাড়ী এলাকা তাই সঠিক সময়ে তেলবহনকারী লরিগুলো পৌছাতে পারেনা ।

এই স্টেশনটি ইন্ডিয়ান ওয়েল কর্পোরেশনের আওতায় চলে যেখানে হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম বা এইচপি সাহায্য করে থাকে।

লেখাটি শেয়ার করুন