কলকাতার প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ ১৪টি রেষ্টুরেন্ট, যেগুলোতে খেতে ভুলবেন না



 

কলকাতা, ঘুরে দেখার যেমন ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান রয়েছে ,তেমনি রয়েছে বিখ্যাত সব খাবারের দোকান । আজকের লেখাতে এমন ১৪টি ঐতিহ্যবাহী খাবার দোকানের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিবো যেগুলোকে সরকার হেরিটেজ খাবারের দোকান হিসেবে সম্মাননা দিয়েছে । মজার কথা হলো সবগুলো দোকানই ১৯৬৬ সালের আগে থেকে একই দোকানে ব্যবসা করে চলছে তাই কলকাতা গেলে এসব এতিহ্যবাহী দোকানে রসনা বিলাস করতে ভুলবেন না ।

তাহলে চলুন শুরু করা যাক

১/ ভীম চন্দ্র নাগ : ১৮২৬ সালে প্রাণ চন্দ্র নাগ কলকাতার বউবাজারে একটি ছোট্ট মিষ্টির দোকান খোলেন। পরে পুত্র ভীম চন্দ্র নাগ সেই দোকানের দায়িত্ব নেন । এই দোকানের মিষ্টি ব্রিটিশদের পছন্দের তালিকায় একদম উপরে ছিলো । এ মিষ্টির গুণকীর্তন চারদিকে খুব অল্প সময়েই ছড়িয়ে পড়ে । এখনও দোকানটি তার সুনাম নিয়ে টিকে আছে । প্রায় ২০০ বছর পুরাতন এ দোকানের মিষ্টি কলকাতা গেলে খেতে ভুলবেন না ।

 

২/ দিলখুশা কেবিন :প্রায় ১০o বছর আগে চুনীলাল দে এই কেবিন তৈরি করেন।দিলখুশা কেবিনের সেরা আইটেম কবিরাজি কাকলেট ,আরও আছে মাটন চপ, ডেভিল, ব্রেস্ট কাটলেট ইত্যাদি।। কবিদের আড্ডা, থিয়েটার পাড়ার লোকজনের আনাগোনা সব মিলিয়ে এ যেন মিনি আড্ডা কফিহাউস।

৩/প্যারামাউন্ট শরবত : বরিশালের নীহাররঞ্জন মজুমদার ১৯১৮ সালে প্যারামাউন্ট নামের এই বিখ্যাত শরবতের দোকান প্রতিষ্ঠা করেন। তবে কলকাতার এই বিখ্যাত শরবতের দোকানের আদি নাম ছিল প্যারাডাইস। কবি নজরুল, উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, শচীনদেব বর্মন,সুভাষ বসু, জগদীশচন্দ্র বসু সহ সে সময়ের সব বিখ্যাত মানুষদের আড্ডাখানা ছিলো এ বশরবতের দোকানটি । এর ডাব দিয়ে তৈরি এক ধরনের শরবত এখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয়

৪/ গিরিশ চন্দ্র দে ও নকুর চন্দ্র নন্দী : ১৮৪৪ সালে গিরিশ চন্দ্র দে আর নকুর চন্দ্র নন্দী দুইজনে মিলিতভাবে এইমিষ্টির দোকান চালু করেন। প্রথম থেকেই এরা জলভরা, কাঁচাগোল্লা, শাঁখসন্দেশ পরিবেশন করে বাঙালি রসনা তৃপ্ত করে চলেছেন। নরম পাকের সন্দেশের এই দোকান কলকাতার অন্যতম প্রাচীন ও সেরা। অভিষেক বচ্চনের বিয়ের অনুষ্ঠানে এই দোকান থেকেই সন্দেশ গিয়েছিল।

৫/ অ্যালেন কিচেন : ১৯২০ সালের এ দোকানের মালিক মুলত স্কটিশ সাহেব মিস্টার অ্যালেন। । অ্যালেন সাহেব দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় দোকানের স্বত্ব দিয়ে যান জীবনবাবুকে। কাটলেটের জন্য এরা প্রথম থেকেই বিখ্যাত। খাদ্যপ্রেমিক সব ধরনের মানুষই রসনাবিলাস করতে চলে আসেন এই এ্যালেনের ডেরায়।

৬/ নিরঞ্জন আগার :১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত নিরঞ্জন আগার নানা ধরনের খাবারের জন্য বিখ্যাত,নিরঞ্জন আগারের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নিরঞ্জন হাজরা মআগার কথাটির মানে খাবারের জায়গা। এদের সেরা খাবার এগ ডেডিল। মান্না দে, বিকাশ রায়, উৎপল দত্ত, তরুণকুমার, অপর্ণা সেন প্রমুখ ব্যক্তিত্বরা এখানে প্রায়ই আসতেন।

৭/ ইউ চিউ রেস্টুরেন্ট : ১৯২৭ সালে এক চাইনীজ দম্পতির প্রতিষ্টিত এ রেষ্টুরেন্টটি এখনো মাথা উচু করে টিকে আছে । ইউরোপিয়ান ও চাইনীজ দুইধরনের খাবারই পাবেন । চাইনিজ খাবারের স্বাধ নিতে চাইলে ইউ চিউ হতে পারে আপনার জন্য কলকাতায় এক বেস্ট রেষ্টুরেন্ট ।

৮/নবীন চন্দ্র দাস :   নবীন চন্দ্র দাসকে বলা হয় রসগোল্লার আবিষ্কারক ।১৯৩৫ সালে বাগবাজারের নবীন চন্দ্র দাস রসগোল্লাকে বাজারজাত করেন,তার রসগোল্লার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে কলকাতার সবখানে । তারপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি । বাগবাজারের নবীন চন্দ্র দাস কলকাতার মানুষ চিনে ‘রসগোল্লার কলম্বাস’ হিসেবে।

৯/ মোকাম্বো রেষ্টুরেন্ট : ১৯৪১ সালে এই রেষ্টুরেন্টের যাত্রা শুরু । মোকাম্বোর প্রথম শেফ ও ম্যানেজার ছিলেন অ্যান্টোনিও প্রানধে। তিনি ইটালির মানুষ। তাই গোড়া থেকেই এই রেঁস্তোরার খাদ্য তালিকায় ইউরোপিয়ান ও ইটালিয়ান খাবারের আধিক্য ছিল। ইউরোপিয়ান বা ইটালীর খাবারের জন্য বেস্ট এটি এছাড়া এখানে মিউজিকের আসরও বসে । কলকাতার একটু ধনীক শ্রেনীর কাছে বেশ জনপ্রিয় এটি ।

১০/সিরাজ গোল্ডেন রেষ্টুরেন্ট : মোগলাই খানা পরিবেশনের উদ্দেশ্যে ১৯৪১ সালে বিহার থেকে কলকাতায় আসেন মহম্মদ আরশাদ আলি এবং মহম্মদ হুসেন। বিখ্যাত এক বাবুর্চির বংশধর মহম্মদ সামসুদ্দিনের সঙ্গে। এই তিন জন মিলে বানিয়ে ফেলেন সিরাজ গোল্ডেন রেস্তোরাঁ। কলকাতায় আসা বহু সেলিব্রেটির প্রথম পছন্দ সিরাজের বিরায়ানি।

১১/কে সি দাস : এরাই হলো রসমলাই এর আবিষ্কারক তবে মজার কথা হলো রসগোল্লার আবিষ্কারক নবীন চন্দ্র দাসেরই  ছেলে কে সি দাস ও নাতি সারদাচরণ দাস মিলে রসমলাই বাজারে চালু করেন।। নানা ধরনের মিষ্টান্নের জন্য সেই ১৯৩৭ থেকে কলকাতা বাসির আস্থার নাম কেসি দাস ।

১২/ইন্ডিয়ান কফি হাউস : ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হাউজটিই সেই বিখ্যাত কফি হাউজের সেই আ্ড্ডাটা আজ আর নেই গানের কফি হাউজ । কলেজ স্ট্রিটের এই বিখ্যাত কফি হাউজটি আজও মাথা উচু করে টিকে আছে । অবশ্যই ঘুরে আসবেন কলকাতা গেলে।

১৩/ সাবির হোটেল : ধর্মপ্রাণ মুসলিম হাজি সাবির আলি ১৯৪৮ সালে চাঁদনি চকে চালু করেন এই খাবার দোকান। বিশেষ করে আফগানিস্তানের কাবুলিওয়ালাদের একটা প্রধান আড্ডার ঠেক ছিল এই সাবির হোটেল।। কলকাতায় রেজালা ঘরানার খাবার আবিষ্কার করেন এই হাজি সাবির আলি।রেজালা ও বিরানীর জন্য এটি বিখ্যাত ।

১৪/কোয়ালিটি রেস্টুরেন্ট : জিভে জল আনা উত্তর ভারতীয়, মুঘলাই ও কন্টিনেন্টাল খাবারের জন্য বিখ্যাত এই রেস্টুরেন্টটি ১৯৫৪ সালের দিকে যাত্রা শুরু করে আজও সুনামের সাথে টিকে আছে ।

 

প্রতিটি রেষ্টুরেন্টই প্রাচীন বলে কলকাতার সব মানুষই চিনে এছাড়া উবার বা গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে খুব সহজেই এগুলো খুজে নিতে পারবেন ।

যে বাঙ্গালীর কারণে ভারতীয় উপমহাদেশের ট্রেনে টয়লেট বসানো হয়

 

টয়লেট/বাথরুম প্রতিটি ট্রেনের জন্যই খুব জরুরী বিষয় আজ জানাবো কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে এবং কার অবদানে সর্বপ্রথম ট্রেনে টয়লেট চালু হয়।

উপমহাদেশ মানে ভারত বাংলাদেশ পাকিস্তানে সর্বপ্রথম রেলচালু হয় ১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল। এ রেলটি চালু হয়েছিলো মুম্বাই থেকে থানা পর্যন্ত মোট ৩৬কিমি রাস্তা ।

কিন্তু যখন প্রথম ট্রেন চালু হয় তখন কিন্তু ট্রেনগুলোতে কোন টয়লেট ছিলোনা বিষয়টা একদম বাসের মতো ছিলো তাহলে টয়লেট কবে থেকে চালু হলো তা নিয়ে খুব মজার একটা ঘটনা রয়েছে

ভারতে ট্রেন চালুর ৫৬ বছর পর মানে ১৯০৯ সালে ট্রেনে সর্বপ্রথম টয়লেট সংযোজন করা হয়

ভারতীয় বাঙ্গালী বাবু অখিল চন্দ্র সেন ট্রেনে চড়ে বসেছেন কিন্তু বেচারা ট্রেনে উঠার আগে বাড়ী থেকে পেটভর্তি কাঠাল খেয়ে এসেছেন সেজন্য তার পেটে সমস্যা শুরু হয়। ট্রেন যখন আহমেদপুর স্টেশনে পৌছালো অখিল বাবু আর চাপ সামলে রাখতে পারলেন না ট্রেন থেকে নেমেই পাশেই টয়লেট সারতে গেলেন ,তখনও কিন্তু কোন ট্রেনে টয়লেট ছিলোনা । সে টয়লেট করা অবস্হায়ই ট্রেনে ছেড়ে দিতে ট্রেনের গার্ড হুইসেল মেরে দিলো বাঙ্গালী বাবু অখিল চন্দ্র সেন তখন এক হাতে লোটা আরেক হাতে ধুতি নিয়ে দিলো দৌড় ট্রেন ধরতে , কিন্তু বেচারা উষ্ঠা খেয়ে পড়ে গেলো,সে রয়ে গেলো আহমেদপুর স্টেশনে। পরে সে বাড়িতে এসে রেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখলো যে চিটিঠি এখনো দিল্লীর রেল মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে কেউ গেলে দেখতে পারেন ।

সে যা লিখলো তার বাংলা হলো

প্রিয় মহোদয়,
আমি যাত্রীবাহী ট্রেনে আহমেদপুর স্টেশনে পৌছাই এবং আমার পেট ছিলো কাঁঠালে পরিপূর্ণ । আমি বাথরুম করতে নামি এবং একটু পরই গার্ড হুইসেল বাজিয়ে দেয় আমি এক হাতে বদনা এক হাতে ধুতি ধরে দৌড়াই কিন্তু আমি পড়ে যাই এবং স্টেশনের সবাই আমাকে দেখে অবাক হয় আমি স্টেশনেই রয়ে যাই ।

এটা খুব খারাপ ,যদি কোন পেসেন্জারের বাথরুমে যাওয়া লাগে তার জন্য কি গার্ড ৫মিনিট অপেক্ষা করতে পারলোনা । আপনারা সে গার্ডকে বড় জরিমানা করুন, না হয় আমি এ নিয়ে পেপার পত্রিকাতে লেখা শুরু করবো

তার সেই চিঠি পেয়ে রেল কর্তৃপক্ষ ট্রেনে টয়লেট বসানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং ট্রেনে যাত্রীদের সুবিধার জন্য টয়লেট বসান ।

আসল চিঠিটিতে সে ইংরেজীতে যা লিখিছিলো তা হলো

Dear Sir,

I am arrive by passenger train at Ahmedpur station and my belly is too much swelling with jackfruit. I am therefore went to privy. Just I doing the nuisance the guard making whistle blow for train to go off and I am running with lota (water pot) in one hand and dhoti (clothes) in the next. When I am fall over and expose all my shockings to man and woman on platform. I am got leaved at Ahmedpur station.

This too much bad, if passengers go to make dung, the damn guard not wait train five minutes for him? I am therefore pray your honour to make big fine on that guard for public sake otherwise I am making big report to papers.

Yours faithfull servant
Okhil Ch Sen

শ্রীকান্ত জিচকর-ভারতবর্ষের সবচেয়ে শিক্ষিত ব্যক্তি যাকে বলা হয়

 


আমরা জীবনে নানা ভাবে প্রাতিষ্টানিক শিক্ষা লাভ করে থাকি তারপর হয়তো কেউ ব্যবসা কেউ চাকুরীর জন্য চেষ্টা করি কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন একটা মানুষ কতটা শিক্ষিত হতে পারে বা কতটা কোয়ালিফাইড হতে পারে? আজকে ভারত বর্ষের সবচেয়ে শিক্ষিত বা কোয়ালিফাইড ব্যক্তির কথা বলবো যার পড়ালেখার কথা শুনলে চোখ কপালে উঠবে ।

ভারতবর্ষের সবচেয়ে কোয়ালিফাইড ব্যক্তি বলা যায় ভারতের শ্রীকান্ত জিচকর কে ।

মারাঠি এই লোকের নাম শ্রীকান্ত জিচকর। ১৯৫৪ সালে ১৪ ই সেপ্টেম্বর নাগপুর জেলার কাটল নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তাকে ভারতবর্ষের সবচেয়ে কোয়ালিফাইড ব্যাক্তি কি জন্য বলা হয় তা জানতে আগে দেখুন সে শিক্ষাজীবনে কি করেছে-

  • সে প্রথমে এমবিবিএস ও এমডি ডিগ্রী শেষ করে ডাক্তার হয়েছে
  • তারপর L.L.B করলেন সাথে করলেন ইন্টারন্যাশানাল ল এর ওপর স্নাতকোত্তর
  • বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এর ওপর ডিপ্লোমা করলেন তারপর M.B.A ,
  • সাংবাদিকতা নিয়ে করলেন স্নাতক/অনার্স

ভাবছেন বাহ এত ডিগ্রী !! থামুন সবেতো তার পড়ার ইতিহাস শুরু ……তারপর সে মোট দশটা বিষয়ে স্নাতকত্তোর ডিগ্রী শেষ করেন বিষয়গুলো হলো

১.ইকোনমিক্স
২.সোশিওলজি
৩.পাবলিক আ্যডমিনিস্ট্রেশন
৪.সংস্কৃত
৫.ইতিহাস
৬.ইংরেজী
৭.দর্শন বিদ্যা
৮.পলিটিক্যাল সায়েন্স
৯.ইন্ডিয়ান হিস্ট্রী, কালচার,এন্ড আর্কেওলজি
১০.সাইকোলজি
সবগুলো বিষয়ে তিনি প্রথম শ্রেনী পেয়ে পাস করেন।

শ্রীকান্ত জিচকর

পুরো শিক্ষাজীবনে সে ২৮টি স্বর্ণপদক পেয়েছেন এবং ২০টি ডিগ্রী লাভ করেছেন ৪২টি ভার্সিটি থেকে।

নিশ্চয় এতক্ষণে অবাক হতে হতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন কিন্তু শ্রীকান্ত জিচকর কিন্তু ক্লান্ত হয়নি ।

১৯৭৮ সালে সে ভারতের বিসিএস মানে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে পরীক্ষা দিয়ে পুলিশে জয়েন করে আবারও চাকুরী ছেড়ে দিলেন ১৯৮০ সালে আবার সিভিল সাভিসে পরীক্ষা দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে জয়েন করে কিছুদিন পর চাকুরী ছেড়ে দেন ।

চাকুরী ছাড়ার কিছুদিন পরই মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করে ৩৬ বয়সে ভারতের সবচেয়ে কম বয়সে এমএলএ নির্বাচিত হোন এবং মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তিনি একাই ১৪টি মন্ত্রণালয় সামাল দিতেন । এরপর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস থেকে তিনি ১৯৯২ সাল নাগাদ রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হলেন।

অসম্ভব মেধাবী এই শ্রীকান্তক জিচকরকে ভারতের সবচেয়ে শিক্ষিত ব্যক্তির খেতাব দেওয়া হয় এবং১৯৮৩ তে বিশ্বের অসামান্য দশজন তরুণ হিসেবেও নির্বাচিত হন।

তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরীতে বই ছিলো প্রায় ৫২০০০ । এছাড়া তিনি শুধু বই নিয়ে পড়ে ছিলেন না তিনি একাধারে ফটোগ্রাফার অভিনেতা চিত্রশিল্পী আরও নানা গুণে গুণান্বিত ছিলেন যা বলে শেষ করা যাবেনা।

২রা জুন , ২০০৪ এ নাগপুরে পথ দুর্ঘটনায় ওনার মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৪৯ ।

ফিঙ্গারপ্রিন্টের আবিষ্কার ও বাঙ্গালীর কৃতিত্ব গোপন করার ইতিহাস

রতিটি মানুষের আঙ্গুলের ছাপ ভিন্ন, কারও সাথে কারও আঙ্গুলের ছাপের কোন মিল নেই । আঙ্গুলের ছাপ বা ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে বর্তমানে ধরা পড়ছে অপরাধী ,প্রতিটি মানুষেরও আলাদা আলাদা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে । আজকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট আবিষ্কারের ইতিহাস ও বাঙ্গালীর কৃতিত্ব তুলে ধরবো।

কোন কিছুর উপর হাত রাখলে সেখানে যে প্রায় অদৃশ্য একটি ছাপ পড়ে যায় এ বিষয়টি সম্পর্কে মানুষ সর্বপ্রথম জানতে পারে প্রায় ২০০ বছর আগে ।

১৮৫৯ সালে ভারতের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্রিটিশ স্যার উইলিয়াম হারশেলস প্রথম আবিষ্কার করেন যে সময়ের সাথে সাথে মানুষের আঙ্গুলের ছাপের কোনো রদবদল ঘটে না, বরং একই থাকে তারপর ১৮৭৭ সালে তিনি স্বাক্ষরের মাধ্যম হিসেবে আঙ্গুলের ছাপও দেয়ার নিয়ম হুগলী জেলায় প্রতিষ্ঠা করেন।

১৮৮০ সালে খ্যাতনামা বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী ‘Nature’-এ প্রকাশিত এক চিঠিতে ইংরেজ দুই বিজ্ঞানী হেনরি ও উইলিয়াম হার্শেল প্রথমবারের মতো পুরো দুনিয়াকে জানান যে প্রতিটি মানুষের আঙ্গুলের ছাপ ভিন্ন একজনের সাথেআরেকজনের কোন মিল নেই এবং তা সহজে মুছে যায়না।

এরপর ১৮৯২ সালে , স্যার ফ্রান্সিস গ্যাল্টন প্রকাশ করেন ফিঙ্গার প্রিন্টস নামের যাতে বহু তথ্যসমৃদ্ধ ও আলোচিত বই তিনি এই বইয়েন আঙ্গুলের ছাপের শ্রেণীবিন্যাস করেছিলেন।

 

গ্যাল্টনের করা এই শ্রেনীবিন্যাসকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যান স্যার হেনরী। তার এই শ্রেণীবিন্যাস অপরাধবিজ্ঞানে ‘হেনরি ক্লাসিফিকেশন সিস্টেম’ নামে পরিচিত। এই শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।

হেনরি ক্লাসিফিকেশন সিস্টেমের জন্য স্যার হেনরি ব্রিটেন ও সারা বিশ্বে বহু সম্মাননা লাভ করেন। অপরাধবিজ্ঞানে অভূতপূর্ব এই অবদানের সব কৃতিত্ব হেনরীর ভাগ্যে জুটে । কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এই শ্রেণীবিন্যাস কিন্তু পুরোপুরি তার অবদান নয়। তিনি ছিলেন শুধুমাত্র এর তত্ত্বাবধায়ক। তার তত্ত্বাবধায়নে কাজি আজিজুল হক ও হেমচন্দ্র বসু নামের দুই মেধাবী বাঙ্গালী সন্তান করেছিলেন কাজটি ,যা তখন বেমালুম চেপে যান স্যার হেনরী।কিন্তু সত্য কখনো চাপা থাকেনা তা প্রকাশ পাবেই পাবে , বিশ্বের কাছে প্রকাশ পায় ১০০ বছরেরও পর ,২০০৫ সালের কারেন্ট সায়েন্স সাময়িকীর এক দীর্ঘ গবেষনামুলক প্রতিবেদনে ।

কাজী আজিজুল হক

নাম কাজি সৈয়দ আজিজুল হক জন্ম বাংলাদেশের খুলনাতে । সময় ১৮৯২ সাল, স্যার হেনরি তখন ফিঙ্গারপ্রিন্টের শ্রেণীবিন্যাস নিয়ে খুবই আগ্রহী সে তার এই কাজে নিয়োগ করলেন দুই মেধাবী বাঙ্গালী আজিজুল হক ও হেমচন্দ্র বসুকে । দিন রাত পরিশ্রম করে আজিজুল নির্মাণ করলেন সিস্টেমটির মূল গাণিতিক ভিত্তি। তিনি একটি বিশেষ গাণিতিক ফর্মুলা আবিষ্কার করলেন।এই ফর্মুলার আলোকে তিনি আঙুলের ছাপের ধরনের ওপর ভিত্তি করে বানালেন ৩২টি সারি, এবং সেই ৩২টি সারিতে সৃষ্টি করলেন এক হাজার ২৪টি খোপ। এভাবে তিনি তার কর্মশালায় সাত হাজার আঙ্গুলের ছাপের বিশাল এক সংগ্রহ গড়ে তুললেন। তার সহজ-সরল এই পদ্ধতিতে আঙ্গুলের ছাপ সংখ্যায় লাখ লাখ হলেও শ্রেণীবিন্যাস করার কাজ সহজ করে দেয়। এদিকে হেমচন্দ্রও কিন্তু বসে থাকেনি আঙ্গুলের ছাপের টেলিগ্রাফিক কোড সিস্টেম প্রণয়ণ করলেন তিনি।

কিন্তু এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব চলে যায় এই কাজের তত্বাবধায়ক স্যার হেনরির । সারা বিশ্বব্যাপী তখন স্যার হেনরি ক্লাসিফিকেশন সিস্টেম এর গ্রহণযোগ্যতা শুরু হয় এবং অপরাধী সনাক্ত করণে এই সিস্টেম বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা পায় । ১৯০১ সালে সর্বপ্রথম এটি স্কটলন্ড পুলিশ অপরাধীকে সনাক্ত করণে ব্যবহার করা শুরু করেন ।

স্যার হেনরী

তবে সে সময়ে আজিজুল হকের অবদান পুরোপুরি অস্বীকারও করা হয়নি ১৯১৩ সালে তিনি ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে ‘খান সাহেব’, এবং ১৯২৪ সালে ‘খান বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত হন। বিশেষ জমি লাভ করেন এবং ৫০০০ টাকাও পুরষ্কার হিসেবে পান । এমনকি পুলিশ বাহিনীতেও তিনি বিশেষ সম্মানের সাথে চাকুরী করে হোন এসপিও । ।

তবে ইতিহাস ঘেটে পাওয়া যায় বিবেকের জ্বালা হোক বা অন্য কারণ হোক হেনরি ১৯২৬ সালের ১০ মে ইন্ডিয়া অফিসের তখনকার সেক্রেটারি জেনারেলকে এক চিঠি মারফত এই বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা দেন সে লিখে আমি স্পষ্ট করে জানাতে চাই ফিঙ্গারপ্রিন্টের শ্রেণীবিন্যাস ও তা নিখুত করণে সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে আমার কর্মচারী আজিজুল হকের ,তার এই পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং বেশিরভাগ দেশ তা গ্রহণও করেছে

২০০১ সালের বিজ্ঞানী কলিন বিভানের আঙ্গুলের ছাপ বিষয়ক একটি বই ও কারেন্ট সায়েন্স সাময়িকীর ২০০৫ সালের সংখ্যায় ‘দ্য ফরগটেন ইন্ডিয়ান পাইওনিয়ারস অব ফিঙ্গারপ্রিন্ট সায়েন্স’ শীর্ষক দীর্ঘ নিবন্ধে আজিজুল ও হেমচন্দ্রকে নিয়েব বিস্তারিত লেখা হয় যার কারণে বিশ্বব্যাপী তাদের নিয়ে নতুন আগ্রহের সৃষ্টি হয় ।

১৯৩৫ সালে এই কৃর্তীমান বাঙ্গালী মারা যান এবং বিহারের তাঁর নিজের বাড়ি ‘আজিজ মঞ্জিল’-এর সীমানার মধ্যে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

লেখাটি শেয়ার করুন