এভাবে কখনো প্রথম প্রেমের গল্প লিখতে হবে তা কখনো ভাবিনি । যে গল্প আজ লিখতে বসলাম ,আমি না চাইলেও আমাকে তার স্মৃতি বহন করতে হবে আজীবন ।পিতার কাধে পুত্রের লাশ যেমন ভার ,এ গল্প আমার মনের মাঝে তেমন ভার হয়ে থাকবে আজীবন ।
রবিঠাকুর আমার প্রিয় তাই ভেবেছিলাম আমার জীবনের ভালোবাসাটা মনে হয় শেষের কবিতার অমিত লাবন্যের ভালোবাসার মতো করে আসবে । কিন্তু ইন্টারনেট নির্ভর এ যুগে তার সঙ্গে আমার পরিচয় হলো ইয়াহু ডট কমে গিয়ে ।বড় অদ্ভুত লাগে আজ এ কটা শব্দ ।জীবনকে এলোমেলো করে দেবার জন্য বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের প্রবেশদ্বার ছিল এই ইয়াহু ডট কম ।
ওর সঙ্গে আমার পরিচয়টা ছিলো বড় অদ্ভুত । পরিচিত এক আইডি দেখে ভুল করে তাকে আমিই প্রথম ইন্সট্যন্ট মেসেজ পাঠিয়েছিলাম ।এরপর ভয়েস চ্যাটে পরিচয় পর্ব শেষ করে সে যখন জানতে পারলো আমি মেডিকেলে পড়ি তখন সে হাসতে হাসতে বললো
-ওরে বাবা আমিতো ডাক্তারদের ভয় পাই
- আমিও বললাম ,তাহলেতো আপনার ডাক্তার মেয়ে বিয়ে করা উচিত তাতে ডাক্তার মেয়ে আপনার পাশে থাকলে আপনি যখন ভয় পাবেন তখন ভয় ভাঙ্গিয়ে দেবে ।
-সে বললো, ওরে বাবা ডাক্তার মেয়ে আমি তো তাহলে ভয়েই মারা যাব
-ওরে বাবা আমিতো ডাক্তারদের ভয় পাই
- আমিও বললাম ,তাহলেতো আপনার ডাক্তার মেয়ে বিয়ে করা উচিত তাতে ডাক্তার মেয়ে আপনার পাশে থাকলে আপনি যখন ভয় পাবেন তখন ভয় ভাঙ্গিয়ে দেবে ।
-সে বললো, ওরে বাবা ডাক্তার মেয়ে আমি তো তাহলে ভয়েই মারা যাব
দিন পেরিয়ে মাস গিয়ে পহেলা বসন্তের আগে সে আমাকে তার বন্ধু হবার প্রস্তাব দিয়ে মেইল পাঠাল । আমি তাকে বলেছিলাম আমার নি:স্বার্থ বন্ধু হবেন ? সে আমাকে নি:স্বার্থ বন্ধুত্ব দিয়েছিলো ।এভাবে দিন পেরোতে লাগলো ,সম্বোধন আপনি থেকে তুমিতে নেমে এলো ।আমি মেডিকেল আর সে ছিলো ইন্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ।রোজ ঝগড়া করতাম কার পড়াশুনা কতটা কঠিন তা নিয়ে ।
ক্লাস শেষ করে প্রতিদিন মেইল চেক করতে যেতাম আর সপ্তাহে তিন দিন তার সাথে অনলাইনে কথা হতো । অসাধারণ সব মেইল করতো সে । মনে হতো প্রতিদিন যদি এমন একটা করে মেইল পেতাম ।একটা মেইলের আকর্ষণে ছুটে যেতে যেতে ভাবতেই পারিনি বিধাতা কোন ফাকে অন্য কোন আকর্ষণে জড়িয়ে অন্য কোন সুতায় নতুন একটা রঙ্গিন জান বুনিয়ে দিচ্ছিল ।বড় মধুর ছিলো সেই দিনগুলো । কোনো দিন ভাবিনি সেই মধুর দিনের স্মৃতিগুলো কখনো আমার জীবনে বিষময় হয়ে যাবে ।
ক্লাস শেষ করে প্রতিদিন মেইল চেক করতে যেতাম আর সপ্তাহে তিন দিন তার সাথে অনলাইনে কথা হতো । অসাধারণ সব মেইল করতো সে । মনে হতো প্রতিদিন যদি এমন একটা করে মেইল পেতাম ।একটা মেইলের আকর্ষণে ছুটে যেতে যেতে ভাবতেই পারিনি বিধাতা কোন ফাকে অন্য কোন আকর্ষণে জড়িয়ে অন্য কোন সুতায় নতুন একটা রঙ্গিন জান বুনিয়ে দিচ্ছিল ।বড় মধুর ছিলো সেই দিনগুলো । কোনো দিন ভাবিনি সেই মধুর দিনের স্মৃতিগুলো কখনো আমার জীবনে বিষময় হয়ে যাবে ।
মোবাইল ফোনের এই যুগে আমাদের সম্পর্ক কেবল ইয়াহু ডট কমে সীমাবদ্ধ রইলো না । একসময় তা ০১৭১... এর হয়ে গেল । এত সুন্দর কণ্ঠ মানুষের হতে পারে তা আমার ধারণার অতীত ছিল । এক ফাল্গুনে বন্ধুত্ব হয়েছিলো । আরেক ফাল্গুনে এসে তা রুপ নিলো ভালবাসায় ।আমরা ঠিক করেছিলাম যেদিন সাত ফাল্গুন শেষ হবে সেই ফাল্গুনের ভালোবাসা দিবসে আমাদের প্রথম দেখা হবে । প্রতি ঘন্টায় অন্তত দশটা এসএমএস তাকে করা হতো ,সেই দশটা এসএমএস এর উত্তরে আসতো বিশটা এসএমএস ।
হয়তো বারান্দায় দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছি সে এসএমএস করলো ""প্লিজ বৃষ্টিতে একটু হাত ভেজাও আমি হাত দিচ্ছি ,বৃষ্টিতে হাত দিয়ে মনে মনে ভাবো আমার হাতে হাত দিয়েছো ""
সে আমাকে ভালোবাসা শিখিয়েছে ,বৃষ্টি চিনিয়েছে ,পূর্ণিমার চাদের আলোর সৌন্দর্য্য চিনিয়েছে । ভালোবাসার মধুরতা যে এতটা তীব্র আমি তার কাছে বুঝেছিলাম ।
আমি তার কাছে খুব ছোটদের মতো অভিমান করতাম ।তার সঙ্গে শর্ত ছিলো সে আমাকে যতবার রাগাবে আমাদের দেখা হওয়ার পর গুণে গুণে ততটা সে আইসক্রিম খাওয়াবে এবং আমার সবচেয়ে প্রিয় বেলী ফুলের মালা দিবে ।
হঠাৎ একদিন কি যেন হলো ,সেই ০১৭১...অকার্যকর হয়ে গেল,এসএমএস আসা বন্ধ হয়ে গেল,বন্ধ হয়ে গেলো ইয়াহু ডট কমে মেইল আসাও ।আমি পাগলের মতো হয়ে গেলাম একেকটা দিন আমার কাছে একেকটা যুগ মনে হতে লাগলো । ২১ দিনের মাথায় আবার সেই ০১৭১ ... ঝনঝন করে উঠলো আর আমার সারা দুনিয়াটা আনন্দে দুলে উঠলো ।সেই চিররচিত সম্মোহনী কন্ঠস্বর আমার কানে গনগণিয়ে উঠল কিন্তু বড় শীর্ণ ছিলো সে কণ্ঠস্বর । আনন্দের আতিশয্যে আমি তখন বাক্যহারা । সব অভিযোগ ভুলে ছোট শিশুর মতো কাদতে লাগলাম ।সে আমাকে নীলিমা বলে ডাকতো । সে বললো ""নীলি সাত ফাল্গুনের আগে কি তোমার সঙ্গে আমার দেখা হতে পারে ?তোমায় দেখতে খুব ইচ্ছা করছে "" পৃথিবীর কোনো মেয়ের মনে হয় সাধ্য নেই সেই সম্মোহনী ডাক আগ্রাহ্য করে । আমি তার সঙ্গে দেখা করতে রাজি হলাম । সে আমাকে ঠিকানা দিলো কিন্তু যে ঠিকানা দিলো তা ছিলো একটা ক্লিনিকের । ছুটে গেলাম আমার ভালোবাসার কাছে । সেদিন মনে হয়েছিলো আমার মেডিকেল স্টুডেন্ট হওয়াটা পাপ হয়েছে ।
তার ডায়গোনোসিস রিপোর্ট দেখে বুঝলাম তার লিউকেমিয়ার লাস্ট স্টেজ ,তবু শেষ চেষ্টা করার জন্য তাকে লন্ডন নেওয়া হচ্ছে বোন মেরো ট্রান্সফার করার জন্য ।
কখনো তাকে বলিনি ভালোবাসি ,শুধু ৭ ফাল্গুনের ভালোবাসার দিনে তার হাত ধরে ভালোবাসি বলবো বলে ।আমার ভালোবাসার সেই দুখানা হাত ধরে আমি চিৎকার করে বলতে পারলাম না ভালোবাসা -আমার সবটুকু ভালোবাসা শুধুই তোমার জন্য ।
সে চলে গেলো । দুমাস পার হয়ে গিয়েছিলো যে পর্যন্ত শক্তি ছিলো সে প্রতিদিন তার ল্যাপটপ থেকে আমাকে মেইল করতো ।শেষের দিকের মেইলগুলো ছিলো খুব ছোট ছোট ।
তার শেষ মেইলে সে লিখেছিলো "" নীলি ,হাসপাতালের এ বেডে শুয়ে আকাশ আস্তে আস্তে বড় ঘোলা লাগে ,আচ্ছা লন্ডনের আকাশ কি ঘোলা ? নাকি আমার চোখই ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে ?আমার হৃদয় ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে ? সে লিখেছিলো হৃদয় ঝাপসা হয়ে গেলেও অন্ধকার না হওয়া পর্যন্ত আমার নীলিমাকে ভালোবেসে যাবো ""
এরপর একদিন দুদিন করে অনেকদিন চলে গেলো ।ইয়াহু ডট কমে মেইল আসা থেমে গেলো ।০১৭১..চুপ হয়ে গেলো ।সে আমাকে একটা কুরিয়ার করেছিলো । সে নাকি বলে গিয়েছিলো তার মৃত্যুর পর আমাকে যেন সেটা পৌছে দেওয়া হয় । একটা সাদা বক্সে নীল খামে একটা চিঠি আর ১০০ টা বেলী ফুলের মালা সে পাঠিয়েছিল । চিঠিতে লেখা ছিলো ""নীলি আমার ভালোবাসার ভার তোমার জন্য অনেক দু:সহ হবে তাই তোমাকে মুক্তি দিলাম । তার শেষ মেইলে সে লিখেছিলো "" নীলি ,হাসপাতালের এ বেডে শুয়ে আকাশ আস্তে আস্তে বড় ঘোলা লাগে ,আচ্ছা লন্ডনের আকাশ কি ঘোলা ? নাকি আমার চোখই ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে ?আমার হৃদয় ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে ? সে লিখেছিলো হৃদয় ঝাপসা হয়ে গেলেও অন্ধকার না হওয়া পর্যন্ত আমার নীলিমাকে ভালোবেসে যাবো ""
হ্যা ,তার ভালোবাসার ভার আজ আমার কাছে দু:সহ কিন্তু আমি তার দেওয়া মুক্তি স্বীকার করিনি । স্বেচ্ছায় আজীবন সেই ভার বইব এবং আজও বয়ে যাচ্ছি ।সেই্ ভালোবাসার ভার এতটাই যে আজ আর পূর্নিমার রাতে চাদের দিকে তাকাতে পারিনা অঝোর বৃষ্টিকে অসহ্য মনে হয় । মেডিকেল জীবন শেষ করে এসেছি অনেক দিন হলো ,এবারের ফাল্গুনের পরের দিন ভালোবাসা দিবস । আমার ৭ম ভালোবাসা দিবস । এই দিনে আমাদের দেখা হওয়ার কথা ছিলো । আমি সেদিন কি করবো ? নিজেই বেলীফুল কিনবো ?একা একা রিকশায় মনের চোখ দিয়ে এ শহরের হাজার মানুষের ভিড়ে তাকে খুজব ? নাকি সে আমার প্রিয় আকাশের তারা হয়ে আমার পাশে চিরকাল নি:স্বার্থ বন্ধুর মতো থাকবে ?
জানিনা কি হবে ,তবে আজও গভীর রাতে আকাশের সবচেয়ে উজ্জল তারাটাকে আমার ভালোবাসা মনে করে বলি ""ভালোবাসা ,আমি তোমায় ভালোবাসি ,তোমাকে আমার মনে পড়ে । কখন মনে পড়ে জানো ?আমার মনে পড়ে যখন আমি নি:শ্বাস নিই ।
(ছায়া হাসান,ধানমন্ডি ঢাকা)
8 comments:
Sotti Onk shundor bT is iT real story!! wteva it makes me too much sad. :'(
viashon valo legese........khub kanna pasche.......
পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল
ছায়া হাসান । নাম মুনে তো মনে হচ্ছে তিনি অলরেডি বিবাহিত...
উনি বিবাহিতা হলে কী ভালবাসা শেষ হয়ে যাবে, বিয়ের সাথে ভালবাসার কোনো বিরোধ নেই.........
Very sad story...but it happened sometimes in our life.
গল্পটা সুন্দর..
:( keno emon holo?
Post a Comment