ঘুরোঘুরি কুমিল্লা-কেন আসবেন কিভাবে আসবেন কি দেখবেন কোথায় খাবেন ।।

প্রাচীন আর সমৃদ্ধশালী জেলাগুলোর নাম বললে কুমিল্লার নামটা একদম উপরের দিকেই আসে , আর এ কারণে কুমিল্লা জেলাকে নিয়ে দেশের মানুষের একটা আলাদা আগ্রহ আছে । কুমিল্লা জেলাতে ঘুরে দেখার কি আছে এ নিয়ে হরহামেশাই প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয় ,কিভাবে আসবো কুমিল্লা ? ঘুরে দেখার জায়গাগুলোতে কিভাবে যাবো ? খাবো কোথায় ?   এসব কিছুর উত্তর আপনি এ পোস্টে পেয়ে যাবেন ।

প্রথমেই আসি কুমিল্লাতে দেখার মতো কি আছে যার টানে আপনি কুমিল্লা আসবেন ? হুম আছে , কিছু জায়গা আছে যা দেখার জন্য আপনি রসমলাই এর জন্য বিখ্যাত কুমিল্লা জেলায় ঘুরে আসতে পারেন :) এক দিনের জন্য পারফেক্ট ঘুরোঘুরির প্ল্যান বলা যেতে পারে আর ঢাকা থেকে মাত্র দুই ঘন্টার রাস্তা :) তাহলে শুরু করা যাক ?



 শালবন বিহার 


বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম শালবন বিহার কুমিল্লা শহর থেকে ৮ কি. মি. দুরে কোটবাড়িতে অবস্হিত । ধারণা করা হয় যে খ্রীষ্টিয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন। বিহারে সর্বমোট ১৫৫টি কক্ষ আছে । এ কক্ষগুলোতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা থাকতেন এবং ধর্মচর্চা করতেন । 
শালবন বিহার
শালবন বিহারের একাংশ

শালবন বিহার
শালবন বিহার

এছাড়াও বিহারের পাশে জাদুঘর এবং দেশের সবচেয়ে বড় ৩০ ফুট উচু একটি বৌদ্ধ মূর্তি আছে ।।সম্প্রতি বিহারের কাছাকাছি ব্লু ওয়াটার পার্ক নামে একটি পার্ক করা হয়েছে এটাও দেখে আসতে পারেন ।। 

কুমিল্লা শহরের টমছম ব্রিজ থেকে সিএনজিতে করে সরাসরি যেতে পারেন অথবা যারা ঢাকা/চিটাগাং থেকে আসবেন তারা ঢাকা চিটাগাং বিশ্বরোডের কোটবাড়ি বিশ্বরোড দিয়ে প্রবেশ করতে পারেন ।। 

 ময়নামতি ওয়ার সেমেট্রি

কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে ময়নামতি ক্যান্টমেন্টে অবস্হিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত হওয়া মোট ৭৩৭ জন সৈনিকের সমাধিস্হল । কুমিল্লাতে স্হানীয়ভাবে এটাকে ইংরেজ কবরাস্হান বলা হয় ।এই সমাধিস্হলটি ব্রিটিশ সরকার কতৃর্ক পরিচালিত হয়। খুব সুন্দর করে সাজানো গোছানো থাকে সমাধিস্হলটি । রবিবার ব্যতীত প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত সকলের জন্য এটি উন্মুক্ত থাকে ।


War cemetery Comilla
ছবির মতো সাজানো গুছানো কুমিল্লা ওয়ার সেমিট্রি

কুমিল্লা ওয়ার সেমিট্রি

এবার আসা যাক যাবেন কিভাবে ? 
ঢাকা সায়েদাবাদ থেকে বাসে উঠবেন  কুমিল্লা শহরের আগেই কুমিল্লা ক্যান্টমেন্টে নেমে যাবেন সেখান থেকে দশ টাকা রিকশা ভাড়া ।


রুপবান মুড়া এবং ইটাখোলা মুড়া

এই দুইটাই ঐতিহাসিক স্হাপনা আমরা বলি রাজাদের ঘর বাড়ী । ঘুরে আসতে পারেন ভালোই লাগবে এগুলো সবই কোটবাড়িতে শালবন বিহার এলাকাতে অবস্হিত । যেকোন অটো বা সিএনজিকে বললেই নিয়ে যাবে ।
ইটাখোলা মুড়া

রুপবান মুড়া

 ধর্মসাগর 

কুমিল্লার বাইরের মানুষ সম্ভবত ধর্মসাগরপাড়ের কথা সবচেয়ে বেশি শুনেছেন কারণ কুমিল্লা শহরের মানুষের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র এটি । ধর্মসাগর পাড় সবার জন্য সবসময় উন্মুক্ত দিন রাত এখানে আড্ডা আর মানুষের আনাগোনা থাকে । এটি শহরেই অবস্হিত এবং যে কাউকে বললেই নিয়ে আসবে ।
ধর্মসাগর

ধর্মসাগর পাড়

 এখন নিশ্চয় ভাবছেন কুমিল্লাতে আসলে কোনটার পর কোনটা দেখতে গেলে সময় বাঁচবে এবং সাশ্রয়ী হবে ।। শালবন বিহার ,ওয়ার সেমিট্রি ,রুপসাগর পার্ক,ইটাখোলা মুড়া ,রুপবান মুড়া সবগুলো একদমই কাছাকাছি অবস্হিত ।।তবে ওয়ার সেমিট্রি আর রুপসাগর পার্ক এক সাইডে আর শালবন বিহার ইটাখোলা মুড়া রুপবান মুড়া কুমিল্লা বার্ড এগুলো একদিকে
যারা ঢাকা থেকে আসবেন তারা কুমিল্লা ক্যান্টমেন্ট নেমে যেতে পারেন তারপর ওয়ার সেমিট্রি দেখে  কুমিল্লা ক্যান্টমেন্ট থেকে সিএনজি বা মাইক্রোতে কোটবাড়ি বিশ্বরোড পর্যন্ত যাবেন সেখান থেকে কোটবাড়ি  শালবন বিহার এবং বাকীগুলো দেখার জন্য যেতে পারেন,   আপনি যদি পার্সোনাল গাড়ী নিয়ে আসেন তাহলে ক্যান্টমেন্ট পেরিয়ে কোটবাড়ি বিশ্বরোড দিয়ে শালবন বিহার এলাকায় যেতে হবে । কোটবাড়িতে সব দেখে আপনি কুমিল্লা শহরে চলে আসতে পারেন ,এখানে ধর্মসাগর পাড় দেখে কুমিল্লার বিখ্যাত রসমলাই নিয়ে বাড়ী ফিরতে পারেন । 

 সবই তো হলো এবার খাবেন কোথায় তার একটা সুরাহা হওয়া দরকার কি বলেন ? খাওয়ার সময়টাতে আপনি কোন এলাকাতে অবস্হান করেন এটার উপরে নির্ভর করে আপনি কোথায় খাবেন । যদি কুমিল্লা ক্যান্টমেন্ট থাকেন তাহলে কাকলী রেস্তোরা অথবা মিয়ামীতে খেতে পারেন মানস্মত খাবার পাবেন ।। যদি কোটবাড়ি অবস্হান করেন তাহলে বলা রাখা ভালো যে ওখানে খাবার তেমন ভালো কোন হোটেল নেই সেক্ষেত্রে কোটবাড়ি বিশ্বরোড এসে যদি পার্সোনাল গাড়ী থাকে সাথে চিটাগাং রোডের দিকে গেলে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এ  আপনি নুরজাহান হোটেল (একটু এক্সপেনসিভ) অথবা ছন্দু হোটেলে খেতে পারেন অথবা আপনি শহরেও চলে আসতে পারেন ।। এক্ষেত্রে শিল্পী আসিফের হোটেল বাংলা রেস্তোরাতে খেতে পারেন আর যদি র‍্যান্ডমলী ভাত গরু মুরগী খেতে চান তাহলে কুমিল্লা রাজগন্জ হোটেল ডায়না ,কান্দিরপাড় কস্তুরি হোটেল ,সিটি রেষ্টুরেন্ট, ফৌজদারিতে সমতা হোটেল এ খেতে পারেন ।। 

 ঘুরোঘুরি হলো খাওয়া দাওয়া হলো এখন রসমলাই কিনার পালা, কুমিল্লাতে একশো একটা মাতৃভান্ডার রসমলাই এর দোকান আছে কিন্তু আপনাকে আসল মাতৃভান্ডারের রসমলাই চিনে নিতে হবে । আসল মাতৃভান্ডারের দোকানটি হলো শহরের মনোহরপুরে / কান্দিরপাড় কালিমন্দিরের বিপরীতে ।। এখানে একটি মাত্রই রসমলাই এর দোকান আছে আর যত দেখবেন সব নকল মাতৃভান্ডার । যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই দেখিয়ে দিবে ।

তো চলে আসুন কুমিল্লা একদিনের সফরে দেখে যান ঐতিহ্যবাহী জেলা কুমিল্লার রুপ ।

এখনো মনে খুত খুত আছে ? কোথাও বুঝতে সমস্যা হচ্ছে ?  ওকে আমাকে ফেইসবুকে নক করুন  যা হেল্প লাগে অবশ্যই করবো ।

5 comments:

Mohsin Alam said...

কুমিল্লাতে গেলে আপনাকে সাথে নিয়ে ঘুরার ইচ্ছা আছে। কি থাকবেন সাথে? :)

Unknown said...

কুমিল্লায় আপনাকে নিয়ে ঘুরতে হবে তাহলে অনেক সময় বাঁচবে :-) :-)

Anonymous said...

এগুলো ছাড়াও আরো কিছু সুন্দর জায়গা আছে, ঐগুলোর নাম গুলো উল্লেখ করলেও ভাল হত।

Anonymous said...

গোমতী নদীরর কথা জানতে চাই

Unknown said...

Vai thakbo koi like hotel ar ki besbosta ase

Post a Comment

লেখাটি শেয়ার করুন