নাফাখুম জলপ্রপাত ,প্রকৃতির কোলে এক অপার সৌন্দর্য্য । চলতে চলতে রেমাক্রি খালটা হঠাৎ করে মনে হয় নিজেকে মেলে দিয়েছে অপার সৌন্দর্য্যে । সেই সৌন্দর্য্যটার নাম নাফাখুম জলপ্রপাত ।
বান্দরবনের এক গহীনে এই নাফাখুম জলপ্রপাত অবস্হিত । আমরা গিয়েছিলাম সেই গহীনের লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্য্যটাকে মন ভরে দেখতে ।
নাফাখুমের ব্যাপারে সংক্ষেপে কিছু তথ্য শেয়ার করি । নাফাখুম বান্দরবনের থানচি উপজেলায় অবস্হিত । বান্দরবন শহর থেকে থানচি উপজেলা প্রায় ৭৩ কিমি দুরে । থানচি থেকে রেমাক্রি নৌকাতে যেতে হবে এক্ষেত্রে আড়াই থেকে তিন ঘন্টা লেগে যাবে । রেমাক্রি থেকে দুই ঘন্টা ঝিরিপথে হাটলেই চোখের সামনে হাজির হবে নাফাখুম জলপ্রপাত ।
কি পাওয়া গেলেতো নাফাখুমের অবস্হান সম্পর্কে একটা ছোট্র ধারণা ?
তাহলে আমাদের গল্পটা গাইডলাইন আকারে বলে দেই যাতে আপনি বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে চোখ বন্ধ করে চলে যেতে পারেন নাফাখুমের কোলে ।
নাফাখুম দেখতে আমাদের দল রাতের বাসে রওয়ানা হয়ে গেলাম বান্দরবনের উদ্দেশ্যে রাতভর জার্নি করে সকালে নেমে পড়লাম বান্দরবন বাস স্ট্যান্ডে । সকালে নেমেই পেট দিলো নাস্তার তাগাদা ,ঝটপট আমরা নাস্তা সেরে নিলাম । নাস্তা করতে করতে আমি দ্রুত চান্দের গাড়ী ঠিক করতে । চার হাজার টাকা দিয়ে একটা চান্দের গাড়ী নিয়ে আসলাম । গন্তব্য থানচি উপজেলা । সময় লাগবে আড়াই ঘন্টা আনুমানিক । বর্তমানে চান্দের গাড়ী রিজার্ভ ৬০০০ টাকা ফিক্সড ।
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে থানচিতে আপনি বাস দিয়েও যেতে পারবেন বান্দরবন শহর থেকে সেক্ষেত্রে প্রায় ছয় ঘন্টা লেগে যায় ভাড়া ২০০ টাকা করে প্রতিজন ।
যাই হোক আমরা চাঁন্দের গাড়ী পেয়ে সবাই খুব উৎফুল্ল পাহাড়ী রাস্তায় চান্দের গাড়ীর ছাদে বসে গান ধরলো ছেলেপেলেরা ,আসলে এত সুন্দর চারপাশ যে ভাঙ্গা গলায়ও গানটা এমনিতেই চলে আসে ।
মজায় মজায় কখন যে থানচি পৌছে গেলাম বুঝতেই পারলাম না ,থানচিতে আগেই ফোন দিয়ে গাইড ঠিক করে রেখেছিলাম আমরা । থানচি থেকে আমরা যাবো রেমাক্রি । থানচি থেকে রেমাক্রি যাবার জন্য নৌকা রিজার্ভ করে যেতে হয় । থানচি থেকে রেমাক্রি যাবো আমরা সাঙ্গু নদী হয়ে ।
দুপুরের খাবারটা এখানেই খেয়ে নিলাম ,আমাদের গাইড এর মাঝে আমাদের নাম ধাম ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি ইত্যাদি সব রেডি করে ফেললো কারণ থানচিতে বিডিআর ক্যাম্প এবং পুলিশের কাছে কয়জন যাচ্ছে প্রত্যেকের নাম এড্রেস সব কিছু জমা দিয়ে যেতে হয় ।
খাবার খাওয়ার পর পুলিশ ক্যাম্পে সবাই গেলাম আমাদের ছবি তুলে রাখা হলো তারপর বিডিআর ক্যাম্পেও রিপোর্ট করে নৌকাতে উঠে পড়লাম ।
নৌকাগুলো বেশ সরু সাঙ্গু নদী হয়ে রেমাক্রি পৌছোতে আমাদের প্রায় তিন ঘন্টার মতো লাগবে ।
নৌকা যখন চলতে শুরু করলো তখন দুপুরের কড়া রোদের মাঝেও সবাই খুব উৎফুল্ল হয়ে উঠলো কারণ একটাই সাঙ্গুর দু পাশের দৃশ্য মন ভালো করে দেবার জন্য যথেষ্ট । উচু উচু পাহাড় পাহাড়ীদের জীবন যাত্রা এসব দেখতে দেখতে রেমাক্রির আগে আমরা বড় পাথর এলাকাতে পৌছে গেলাম ।
বড় পাথর এলাকার বিশেষত্ব হলো এখানে চারপাশে বিশাল বিশাল পাথরে । এত সুন্দর দৃশ্য আর নৌকা থামাবোনা তা কি হয় বলুন !! নৌকা থামিয়ে বড় বড় পাথরগুলো চড়ে মন ভরে ছবি তুললাম সবাই মিলে ।
![]() |
বড় পাথর এলাকা এটা ,এই পাথরগুলোর ফাঁক গলেই নৌকা আপনাকে নিয়ে যাবে ,এখানে অবশ্যই নৌকা থামিয়ে কিছুটা সময় কাটাবেন ,ভাল্লাগবে :) |
যাই হোক বড় পাথরকে পিছনে ফেলে আবারও রেমাক্রির উদ্দেশ্যে নৌকা চলছে । বিকাল নাগাদ পৌছে গেলাম রেমাক্রিতে । এখানে রাত কাটাবো আমরা । বেশ কিছু কটেজ রয়েছে যেখানে প্রতিজন একশো টাকার বিনিমনে আপনি থাকতে পারবেন । খাবারভেদে ১০০-১৫০ টাকা পড়বে প্রতিবেলা ।
সারাদিন এত হ্যাপা নিলাম রোদে পুড়লাম গোসল কি হবেনা ? মনে যখন এই প্রশ্ন তখনই চোখের সামনে পড়লো রেমাক্রিখুম , রেমাক্রিতে রেমাক্রিখুম বলে প্রস্হে বড় উচ্চতায় ছোট একটা ঝরনা আছে ।
কথায় বলে একেতো নাচনে বুড়ি তারউপরে ঢোলের বাড়ি ...একেতো গোসলের তৃষ্ঞা আর যদি সামনে পাই রেমাক্রি খুমের মতো সুইট একটা ঝরনা তাহলেতো আর কোন কথাই নেই ,রুমে ব্যাগ রেখে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সবাই ঝরনার ঠান্ডা পানিতে ।
গোসলের তৃষ্ঞা ষোলকলা পূর্ণ করে রুমে চলে আসলাম রাতে খুব একটা জাগলাম না কারণ ফজরের ওয়াক্তে উঠেই নাফাখুমের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবো এমন একটা প্লান মাথায় সেট করে নিলাম
ফজরের ওয়াক্তে উঠেই সবাই রেডি হয়ে নিলাম ,আবছা আলো আঁধারের মাঝে আমাদের গাইডকে নিয়ে হাটা ধরলাম দ্যা গ্রেট নাফাখুমের উদ্দেশ্যে ,রেমাক্রি পার হয়ে একটু ভিতরেই দেখলাম কিছু পাহাড়ী দোকান পাট খুলে বসেছে কারণ তারা জানে ট্যুরিস্টরা ভোরে ভোরে বের হয় । রাস্তায় ডিম কলা চা খেয়ে নিলাম ,এখানকার কলা আর পেঁপে গুলো স্পেশালী আমার খুব পছন্দের ফরমালিন মুক্ত একদম ফ্রেশ জিনিস ....খেতে তো একেবারে উম্ম্ম্ম্ম্ম ......
রেমাক্রি থেকে দুই ঘন্টা লেগে যায় নাফাখুম পৌছাতে সূর্যি মামাও আস্তেআস্তে উঠছে আমরাও নাফাখুমের কাছাকাছি পৌছে গেলাম । দুর থেকেই ঝরনার শব্দে সবার মধ্যে একটা অন্যরকম খুশির আভা ফুটে উঠলো .........
এমন ঝরনা দেখলে কি নিজেকে ধরে রাখা যায় বলুন .......ইচ্ছে ছিলোনা কিন্তু তারপরও ঝরনাটার টানে আর থাকা গেলোনা দিয়ে ফেললাম আমরা কয়েকজন লাফ ।
ঝরনার রুপে মুগ্ধ হয়ে অনেকক্ষণ সময় কাটিয়ে এবার ফেরার পালা । বিদায় দিতে মন চায়না তারপরও দিতে হয় । যতদুর চোখ যায় ততদুর ফিরে ফিরে দেখলাম নাফাখুমকে ।
এদিনই আমাদের আবার ফিরতে হবে ঢাকাতে তাই দ্রুত হেটে রেমাক্রি চলে আসলাম । এসে আবার বিপত্তি রেমাক্রি খুম আবারও ডাকে এখানে আবার গোসল করে রেমাক্রি খুমকে বুঝিয়ে সুনিয়ে :p বিদায় নিয়ে নৌকাতে উঠে পড়লাম গন্তব্য সেই থানচি :)
যেহেতু এবার স্রোতের দিকে নৌকা যাবে তাই দুই ঘন্টাতেই থানচি পৌছে গেলাম । থানচি থেকে আবার ও চাঁন্দের গাড়ীতে করে বান্দরবন । বান্দরবন এসে পেট পুরে নাস্তা সেরে গাড়ীতে উঠে পড়লাম ।
সুন্দর সব স্মৃতি মনে গেঁথে ঢাকার উদ্দেশ্য রওয়ানা । ভোরে পৌছে গেলাম ঢাকাতে ।
এবার দ্রুত কিছু ইনফো জানিয়ে দেই কেমন ?
# রেমাক্রিতে থাকতে পারবেন প্রতি রাত একশো টাকা নিবে খুবই সাধারণ ভাবে থাকার ব্যবস্হা । খাবার ভেদে একশো থেকে দেড়শো টাকা নিবে ।
# থানচি থেকে রেমাক্রি নৌকা ৪-৫ হাজার টাকা নিবে আসা যাওয়া রিজার্ভ এক নৌকাতে ছয়জন বসতে পারবেন ।
# গাইডের খরচ দুইদিনে ১৫শ টাকা নিবে ।
# নিরাপত্তা নিয়ে কোন সমস্যা নেই ,মেয়েরাও নিশ্চিন্তে যেতে পারেন ।
খরচগুলো অনেক সময় সিজন অনুযায়ী পরিবর্তন হতে পারে । তাই সাম্প্রতিক তথ্য জেনে যাওয়াটা জরুরী । এজন্য আমাকে ফেইসবুকে নক দিতে পারেন তাহলে সাম্প্রতিক তথ্যগুলো জানিয়ে দিতে পারবো । এছাড়াও আরোও কোন তথ্যের প্রয়োজনে কোন সংকোচ ছাড়াই আমাকে ফেইসবুকে নক দিতে পারেন :) তাহলে আপনাদের প্লান তৈরিতে সহযোগীতা করতে পারবো ।
এছাড়াও আমার ভ্রমণ গ্রুপ স্বপ্নযাত্রার অফিসিয়াল ফেইসবুক গ্রুপে যেকোন হেল্প চাইতে পারেন ,ইনশাল্লাহ সব ধরনের হেল্প পাবেন বা যুক্ত হয়ে থাকতে পারেন যদি কখনো আমাদের সাথে ঘুরতে যেতে চান ।
এছাড়াও আমার ভ্রমণ গ্রুপ স্বপ্নযাত্রার অফিসিয়াল ফেইসবুক গ্রুপে যেকোন হেল্প চাইতে পারেন ,ইনশাল্লাহ সব ধরনের হেল্প পাবেন বা যুক্ত হয়ে থাকতে পারেন যদি কখনো আমাদের সাথে ঘুরতে যেতে চান ।
0 comments:
Post a Comment