কলকাতার প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ ১৪টি রেষ্টুরেন্ট, যেগুলোতে খেতে ভুলবেন না



 

কলকাতা, ঘুরে দেখার যেমন ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান রয়েছে ,তেমনি রয়েছে বিখ্যাত সব খাবারের দোকান । আজকের লেখাতে এমন ১৪টি ঐতিহ্যবাহী খাবার দোকানের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিবো যেগুলোকে সরকার হেরিটেজ খাবারের দোকান হিসেবে সম্মাননা দিয়েছে । মজার কথা হলো সবগুলো দোকানই ১৯৬৬ সালের আগে থেকে একই দোকানে ব্যবসা করে চলছে তাই কলকাতা গেলে এসব এতিহ্যবাহী দোকানে রসনা বিলাস করতে ভুলবেন না ।

তাহলে চলুন শুরু করা যাক

১/ ভীম চন্দ্র নাগ : ১৮২৬ সালে প্রাণ চন্দ্র নাগ কলকাতার বউবাজারে একটি ছোট্ট মিষ্টির দোকান খোলেন। পরে পুত্র ভীম চন্দ্র নাগ সেই দোকানের দায়িত্ব নেন । এই দোকানের মিষ্টি ব্রিটিশদের পছন্দের তালিকায় একদম উপরে ছিলো । এ মিষ্টির গুণকীর্তন চারদিকে খুব অল্প সময়েই ছড়িয়ে পড়ে । এখনও দোকানটি তার সুনাম নিয়ে টিকে আছে । প্রায় ২০০ বছর পুরাতন এ দোকানের মিষ্টি কলকাতা গেলে খেতে ভুলবেন না ।

 

২/ দিলখুশা কেবিন :প্রায় ১০o বছর আগে চুনীলাল দে এই কেবিন তৈরি করেন।দিলখুশা কেবিনের সেরা আইটেম কবিরাজি কাকলেট ,আরও আছে মাটন চপ, ডেভিল, ব্রেস্ট কাটলেট ইত্যাদি।। কবিদের আড্ডা, থিয়েটার পাড়ার লোকজনের আনাগোনা সব মিলিয়ে এ যেন মিনি আড্ডা কফিহাউস।

৩/প্যারামাউন্ট শরবত : বরিশালের নীহাররঞ্জন মজুমদার ১৯১৮ সালে প্যারামাউন্ট নামের এই বিখ্যাত শরবতের দোকান প্রতিষ্ঠা করেন। তবে কলকাতার এই বিখ্যাত শরবতের দোকানের আদি নাম ছিল প্যারাডাইস। কবি নজরুল, উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, শচীনদেব বর্মন,সুভাষ বসু, জগদীশচন্দ্র বসু সহ সে সময়ের সব বিখ্যাত মানুষদের আড্ডাখানা ছিলো এ বশরবতের দোকানটি । এর ডাব দিয়ে তৈরি এক ধরনের শরবত এখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয়

৪/ গিরিশ চন্দ্র দে ও নকুর চন্দ্র নন্দী : ১৮৪৪ সালে গিরিশ চন্দ্র দে আর নকুর চন্দ্র নন্দী দুইজনে মিলিতভাবে এইমিষ্টির দোকান চালু করেন। প্রথম থেকেই এরা জলভরা, কাঁচাগোল্লা, শাঁখসন্দেশ পরিবেশন করে বাঙালি রসনা তৃপ্ত করে চলেছেন। নরম পাকের সন্দেশের এই দোকান কলকাতার অন্যতম প্রাচীন ও সেরা। অভিষেক বচ্চনের বিয়ের অনুষ্ঠানে এই দোকান থেকেই সন্দেশ গিয়েছিল।

৫/ অ্যালেন কিচেন : ১৯২০ সালের এ দোকানের মালিক মুলত স্কটিশ সাহেব মিস্টার অ্যালেন। । অ্যালেন সাহেব দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় দোকানের স্বত্ব দিয়ে যান জীবনবাবুকে। কাটলেটের জন্য এরা প্রথম থেকেই বিখ্যাত। খাদ্যপ্রেমিক সব ধরনের মানুষই রসনাবিলাস করতে চলে আসেন এই এ্যালেনের ডেরায়।

৬/ নিরঞ্জন আগার :১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত নিরঞ্জন আগার নানা ধরনের খাবারের জন্য বিখ্যাত,নিরঞ্জন আগারের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নিরঞ্জন হাজরা মআগার কথাটির মানে খাবারের জায়গা। এদের সেরা খাবার এগ ডেডিল। মান্না দে, বিকাশ রায়, উৎপল দত্ত, তরুণকুমার, অপর্ণা সেন প্রমুখ ব্যক্তিত্বরা এখানে প্রায়ই আসতেন।

৭/ ইউ চিউ রেস্টুরেন্ট : ১৯২৭ সালে এক চাইনীজ দম্পতির প্রতিষ্টিত এ রেষ্টুরেন্টটি এখনো মাথা উচু করে টিকে আছে । ইউরোপিয়ান ও চাইনীজ দুইধরনের খাবারই পাবেন । চাইনিজ খাবারের স্বাধ নিতে চাইলে ইউ চিউ হতে পারে আপনার জন্য কলকাতায় এক বেস্ট রেষ্টুরেন্ট ।

৮/নবীন চন্দ্র দাস :   নবীন চন্দ্র দাসকে বলা হয় রসগোল্লার আবিষ্কারক ।১৯৩৫ সালে বাগবাজারের নবীন চন্দ্র দাস রসগোল্লাকে বাজারজাত করেন,তার রসগোল্লার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে কলকাতার সবখানে । তারপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি । বাগবাজারের নবীন চন্দ্র দাস কলকাতার মানুষ চিনে ‘রসগোল্লার কলম্বাস’ হিসেবে।

৯/ মোকাম্বো রেষ্টুরেন্ট : ১৯৪১ সালে এই রেষ্টুরেন্টের যাত্রা শুরু । মোকাম্বোর প্রথম শেফ ও ম্যানেজার ছিলেন অ্যান্টোনিও প্রানধে। তিনি ইটালির মানুষ। তাই গোড়া থেকেই এই রেঁস্তোরার খাদ্য তালিকায় ইউরোপিয়ান ও ইটালিয়ান খাবারের আধিক্য ছিল। ইউরোপিয়ান বা ইটালীর খাবারের জন্য বেস্ট এটি এছাড়া এখানে মিউজিকের আসরও বসে । কলকাতার একটু ধনীক শ্রেনীর কাছে বেশ জনপ্রিয় এটি ।

১০/সিরাজ গোল্ডেন রেষ্টুরেন্ট : মোগলাই খানা পরিবেশনের উদ্দেশ্যে ১৯৪১ সালে বিহার থেকে কলকাতায় আসেন মহম্মদ আরশাদ আলি এবং মহম্মদ হুসেন। বিখ্যাত এক বাবুর্চির বংশধর মহম্মদ সামসুদ্দিনের সঙ্গে। এই তিন জন মিলে বানিয়ে ফেলেন সিরাজ গোল্ডেন রেস্তোরাঁ। কলকাতায় আসা বহু সেলিব্রেটির প্রথম পছন্দ সিরাজের বিরায়ানি।

১১/কে সি দাস : এরাই হলো রসমলাই এর আবিষ্কারক তবে মজার কথা হলো রসগোল্লার আবিষ্কারক নবীন চন্দ্র দাসেরই  ছেলে কে সি দাস ও নাতি সারদাচরণ দাস মিলে রসমলাই বাজারে চালু করেন।। নানা ধরনের মিষ্টান্নের জন্য সেই ১৯৩৭ থেকে কলকাতা বাসির আস্থার নাম কেসি দাস ।

১২/ইন্ডিয়ান কফি হাউস : ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হাউজটিই সেই বিখ্যাত কফি হাউজের সেই আ্ড্ডাটা আজ আর নেই গানের কফি হাউজ । কলেজ স্ট্রিটের এই বিখ্যাত কফি হাউজটি আজও মাথা উচু করে টিকে আছে । অবশ্যই ঘুরে আসবেন কলকাতা গেলে।

১৩/ সাবির হোটেল : ধর্মপ্রাণ মুসলিম হাজি সাবির আলি ১৯৪৮ সালে চাঁদনি চকে চালু করেন এই খাবার দোকান। বিশেষ করে আফগানিস্তানের কাবুলিওয়ালাদের একটা প্রধান আড্ডার ঠেক ছিল এই সাবির হোটেল।। কলকাতায় রেজালা ঘরানার খাবার আবিষ্কার করেন এই হাজি সাবির আলি।রেজালা ও বিরানীর জন্য এটি বিখ্যাত ।

১৪/কোয়ালিটি রেস্টুরেন্ট : জিভে জল আনা উত্তর ভারতীয়, মুঘলাই ও কন্টিনেন্টাল খাবারের জন্য বিখ্যাত এই রেস্টুরেন্টটি ১৯৫৪ সালের দিকে যাত্রা শুরু করে আজও সুনামের সাথে টিকে আছে ।

 

প্রতিটি রেষ্টুরেন্টই প্রাচীন বলে কলকাতার সব মানুষই চিনে এছাড়া উবার বা গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে খুব সহজেই এগুলো খুজে নিতে পারবেন ।

0 comments:

Post a Comment

লেখাটি শেয়ার করুন