হাতিয়া মনপুরা কিভাবে যাবেন কোথায় থাকবেন কোথায় ঘুরবেন বিস্তারিত

হাতিয়া ও মনপুরা দুইটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ তবে দুইটা দ্বিপেই টুকটাক পর্যটক ঘুরতে যায় বিশেষ করে হাতিয়ার তুলনায় মনপুরা একটু বেশিই পর্যটক যায়। হাতিয়া আর মনপুরা পাশাপাশি দুইটা দ্বিপ এলাকা ।তবে মনপুরা হলো ভোলা জেলার একটি দ্বিপ উপজেলা আর হাতিয়া হলো নোয়াখালীর একটি দ্বিপ উপজেলা।

যাদের বেশি সময় নেই হাতে তারা শুধু মনপুরা ঘুরলেই হয়ে যাবে আমাদের হাতে ঈদের পর সময় বেশি ছিলো তাই আমরা মুলত হাতিয়াও ঘুরে আসছি। 


                                                               ছবি : মনপুরা দ্বিপ

প্রথমে বলি মনপুরার কথা:

মনপুরা হলো ভোলা জেলার একটা দ্বিপ উপজেলা ,এটি মুল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বিপ ,তিনদিকে মেঘনা আর একদিন বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত । যেহেতু এটি উপজেলা তাই দ্বিপ ভাবলেও এটি যথেষ্ট বড় একটি দ্বিপ। 

 

যাবেন কিভাবে :

মনপুরা যাবার সবচেয়ে বেষ্ট পদ্ধতি হলো সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে । প্রতিদিন বিকাল ৫টার দিকে ২টা লঞ্চ ছাড়ে যেগুলো মনপুরা হয়ে হাতিয়া যায় নাম ফারহান ও তাসরিফ,সদরঘাট গেলেই দেখতে পাবেন। সন্ধ্যা ৫-৬টার মধ্যে ছাড়ে এবং রাত ৩-৪টার দিকে আপনাকে মনপুরা ঘাটে নামিয়ে দিবে। যেহেতু ভোর রাতে নামবেন তাই ঘাটে বসে চারদিক আলো হবার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন ঘাটে অনেক মানুষই থাকে এবং বসার জায়গাও থাকে নিরাপত্তা নিয়ে কোন সমস্যা নেই তবে আগে হোটেল ঠিক করা থাকলে সরাসরি হোটেলে চলে যেতে পারেন স্থানীয় মানুষেরা রাতে নেমেই বাড়ী চলে যায় ঘাটেই অটো ও মটরসাইকেল পাবেন নিরাপত্তা নিয়ে কোন সমস্যা নেই এখানে।

লঞ্চের ভাড়া ডেকে গেলে ৫০০ টাকা জনপ্রতি আর কেবিনে গেলে সিঙ্গেল কেবিন ১১০০-১৩০০ আর ডাবল ২২০০-২৪০০ টাকা

যারা বাই রোডে যেতে চান তাদের জন্য কথা হলো বাই রোডে যাওয়া আসাটা বেশ হ্যাসেলের তারপরও যেতে চাইলে ঢাকা বা দেশের যেকোন জায়গা থেকে চলে আসতে পারেন নোয়াখালী ,নোয়াখালী থেকে সিএনজিতে আসবেন চেয়ারম্যান ঘাট ,সেখান থেকে ট্রলার /স্পিডবোটে হাতিয়া ,হাতিয়া থেকে প্রতিদিন একটায় বড় লঞ্চগুলো ছাড়ে যেগুলো মনপুরা হয়ে ঢাকা যায় সেগুলোতে করে মনপুরা আসতে পারেন।

মনপুরাতে হোটেল পাবেন হাজিরহাট বাজারে,লঞ্চ ঘাট থেকে অটো বা বাইকে চলে আসবে হাজিরহাট বাজার।  এখানে ৩-৪টা হোটেল আছে এর বাইরে সরকারী ডাক বাংলো আছে হোটেলগুলোর মান মোটামুটি বলা যায়। ভাড়া ৩০০ থেকে শুরু করে ১৫০০/২০০০ এর মতো । 


                                            ছবি : মনপুরা দ্বিপের ল্যান্ডিং স্টেশনের পাশে

এখন কথা হলো মনপুরা কি দেখবেন ? 

মনপুরা যেহেতু একটি বিচ্ছিন্ন দ্বিপ তাই দ্বিপের চারপাশে সাগর নদীর ভিউটাই এখানকার মুল আকর্ষণ। দ্বিপের চারপাশে নির্মল বাতাস ও চমৎকার ভিউ। এর বাইরে ক্যাম্পিং করার জন্য বেশ ভালো জায়গা এটা।

আলাদা করে বলতে গেলে এখানে দেখতে পারেন দক্ষিণ হাওয়া বীচ,আনন্দবাজার ব্রিজ ,তুলাতুলি ভিউ পয়েন্ট ,ল্যান্ডিং স্টেশন ইত্যাদি। ল্যান্ডিং স্টেশনটি হাজিরহাট বাজারের ঠিক পিছনেই এ জায়গাটি খুব সুন্দর হোটেল থেকে ঘুরে আসতে পারেন হেটে। এর বাইরে বাকীগুলো একটা অটো ঠিক করে দুপুরের পর পুরো বেলা পুরো দ্বিপ ঘুরতে পারেন অটোকে বলবেন পুরো দ্বিপটি ঘুরবেন তারা ঘুরে দেখাবে অটো ৮০০-১০০০ টাকার মতো নিবে। 


কোথায় খাবেন ?

হাজিরহাট বাজারেই অনেক হোটেল পাবেন দেখে শুনে খেতে পারেন এখানে মাছ মাংশ সবই পাবেন। এর বাইরে মহিষের দুধের খেতে পারেন। 

এখানে সোলার বিদ্যুৎ সবসময় পাবেন তবে  সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত এখানো বিদ্যুৎ সাপ্লাই পাবেন তখন সব কিছু চার্জ দিতে পারবেন। 


হাতিয়া :


হাতিয়া মনপুরার মতোই একটি বিচ্ছিন্ন দ্বিপ তবে মনপুরা থেকে হাতিয়া অনেক বড় ও অনেক মানুষের বসবাস ।  মনপুরা থেকে হাতিয়া স্পিডবোর্ডে যেতে পারেন ২০ মিনিটের মতো সময় লাগে ভাড়া নিবে ৪০০-৬০০ টাকা জনপ্রতি তবে সস্তায় যাবার ওয়ে হলো রাত তিনটা চারটায় যে লঞ্চটি মনপুরা আসে সেটাতে উঠে যাওয়া ৬০ টাকা ভাড়া হাতিয়া নামিয়ে দিবে তবে অসুবিধা একটাই আপনাকে তিনটা চারটায় মনপুরা ঘাটে আসতে হবে।যেতে ১ ঘন্টার মতো লাগবে ।

আর যারা বাই রোডে হাতিয়ে যেতে চান তারা নোয়াখালী চলে আসবেন সেখান থেকে চেয়ারম্যান ঘাট আসবেন চেয়ারম্যান ঘাট থেকে ৫০০ টাকায় স্পিডবোডে আর ২৫০ টাকায় ট্রলারে হাতিয়া আসতে পারেন সময় লাগে স্পিডবোর্ডে ২৫ মিনিট আর ট্রলারে ১+ ঘন্টা । এছাড়াও দুপুরের দিকে একটি সী ট্রাক যায় সেটাতে ৫০-১০০ টাকার মধ্যেই যেতে পারবেন।

হাতিয়ার মুল বাজার হলো ওছখালী বাজার এখানে থাকার হোটেল পাবেন ঘাট থেকে ৫০ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে চলে আসতে পারেন ওজখালী এখানে বেশ কিছু থাকার হোটেল আছে দেখে শুনে উঠে যেতে পারেন।আমরা হোটেল সাহারাতে উঠেছিলাম । এটা মোটামুটি মানের একটি হোটেল।

 

                                                               ছবি : মিঠাপুকুর সী বিচ

হাতিয়াতে কি দেখবেন ?

হাতিয়াতে প্রধান আকর্ষণ হলো নিমতলী সি বিচ ,মিঠাপুকার সী বিচ ,দ্বিপ উন্নয়ন সংস্থা পার্ক ইত্যাদি । মিঠাপুকার আর দ্বিপ উন্নয়ন সংস্থা মোটামুটি কাছেই তবেই নিমতলী সি বীচ বেশ দুরে ওছখালী থেকে প্রায় ২৫ কিমি দুরে তাই সময় নিয়ে বের হবে। নিমতলীতে যাবার জন্য বেস্ট হলো বাইক কারণ এরিয়াটি বড় বাইকে সহজে যোগাযোগ করা যায় এর বাইরে সিএনজিও যায় তবে বাইক বেস্ট । 

কখন যাবেন :

বরাবরের মতোই এসব দ্বিপে শীতকালই বেস্ট ভ্রমণ করার জন্য ,উপকুল শান্ত থাকে এবং সৌন্দর্য্য ফুটে উঠে।

কি খাবেন ?

মনপুরাতে বাজারেই হোটেল পাবেন দেখে শুনে খেতে পারেন এখানে সিমা হোটেল নামে একটি হোটেল আছে এটাতে মাছ পাবেন ভালো এর বাইরে নিজেরাও ঘুরে দেখতে পারবেন আর হাতিয়াতে ওছখালী বাজারের বাগেরহাট হোটেল টা ভালো এদের মিষ্টিগুলোও বেশ মজার।  

 

এক্সটা ট্রিপস : 

যারা দুইটা ঘুরার নিয়তে যাবেন তারা চাইলৈ ঝামেলা এড়াতে প্রথমে হাতিয়া ঘুরে নিতে পারেন কারণ হাতিয়া থেকে দুপুরে মনপুরা যাবার লন্জ পাবেন যেটাতে মাত্র ৬০ টাকায় মনপুরা চলে আসতে পারবেন আর মনপুরা থেকে দুপুর দুইটার দিকে লন্জ ছাড়ে যেটা সদরঘাটে ভোরে নামিয়ে দিবে সেটাতে চলে আসতে পারেন এক্ষেত্রে আপনার যাতায়াতে সুবিধা হবে কারণ মনপুরা থেকে হাতিয়া যাবার চেয়ে হাতিয়া থেকে মনপুরা আসা সহজ ।  


আবার যারা যাবার সময় লন্জে ও ফেরার সময় দ্রুত বাইরোডে আসতে চান তারা প্রথমে মনপুরা ঘুরে পরে হাতিয়া আসবেন কারণ হাতিয়া থেকে স্পিডবোর্ডে মাত্র ২০ মিনিটে চেয়ারম্যান ঘাট ও চেয়ারম্যান ঘাট থেকে ৪০-৫০ মিনিটে নোয়াখালী শহরে আসতে পারবেন নোয়াখালী থেকে ঢাকা ফেরার সব ধরনের বাস পাবেন ৪-৫ ঘন্টা লাগবে সর্বোচ্চ যাত্রাবাড়ী পৌছাতে।


আশা করি আপনারা এই লেখাটি থেকে উপকৃত হবেন । এর বাইরে কোন ইনফরমেশন প্রয়োজন হলে সরাসরি ফেইসবুকে নক দিতে পারেন আমাকে https://www.facebook.com/BillahMamun




1 comments:

Arafat Hassan said...

দারুন তথ্যবহুল সুন্দর লেখা

Post a Comment

লেখাটি শেয়ার করুন