শ্রীলংকাকে বলা হয় ভারত সাগরের মুক্তা , দুর থেকে নামের সার্থকতা হয়তো বুঝতে পারবেন না তবে শ্রীলংকাতে ঘুরতে গেলে বুঝে যাবেন কেন এত সুন্দর উপমাতে দেশটিকে নাম দেয়া হয়েছে । ভারত সাগর ঘেরা দেশটি যেন বার বার নিজের সৌন্দর্যের জানান দিচ্ছে নানা রংয়ে নানা ঢংয়ে। সবুজ পাহাড় প্রকৃতি আর সমুদ্র মিলে চমৎকার এক দৃষ্টিনন্দন ভ্রমণ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে শ্রীলংকাতে।
![]() | |||
শ্রীলংকার গালে ফোর্ট থেকে লেখকের ছবি |
শ্রীলংকা ভ্রমণের জন্য চমৎকার জায়গা । আপনি আপনার সময় অনুযায়ী ঘুরতে পারবেন।
এখানকার প্রধান ট্যুরিস্ট স্পস্টগুলো হলো ---কলম্বো /সিগরিয়া/ ক্যান্ডি / নুয়েরা এলিয়া / এল্লা/মিরিশ্যা /গালে / এডামস পিক এগুলো মুলত প্রধান প্রধান ট্যুরিস্ট এরিয়া।
এর বাইরেও শ্রীলংকার আনাচে কানাচে আরও সুন্দর জায়গা আছে।যারা ঝর্না /ট্রেকিং এসব করতে চান তাদের জন্যও চমৎকার সব ট্রেইল আছে এখানে।
আপনি আপনার সময় ও বাজেট অনুযায়ী কোথায় কোথায় যাবেন সেটা সিলেক্ট করতে পারেন। যেমন আমরা মোট ৫ দিনে ঘুরেছি ক্যান্ডি /এল্লা /মিরিশ্যা /গালে /কলম্বো এই পাঁচ জায়গায়।
আপনি ৫-১০ দিনের প্লান করতে পারেন আপনার সময় বাজেট ও চাহিদা অনুযায়ী।
ভিসা :
বর্তমানে শ্রীলংকাতে অন এরাইভাল ভিসা দিচ্ছে ।মানে এয়ারপোর্টেই ভিসা দিবে আগে থেকে ভিসা নিতে হয়না । ভিসা ফী ৫৫ ডলার।
তবে আমরা যখন যাই তখন আগে থেকে ই ভিসা নিতে হয়েছে তাই যখন যাবেন তখনকার লেটেস্ট আপডেট জেনে নিবেন। যদি আগে থেকে ই ভিসা নিতে হয় তবে এজেন্সি বা নিজেই ভিসা করতে পারবেন। ভিসা আবেদনের জন্য হোটেল বুকিং দেখাতে হয় বুকিং ডট কম বা এই ধরনের যেকোন সাই্ট থেকে একটা বুকিং দেখিয়ে দিলেই হবে।
ভিসা আবেদনের লিংক
ফ্লাইট :
শ্রীলংকাতে আপনি সরাসরি ফ্লাইটেও যেতে পারেন শ্রীলংকান এয়ার ও ফিটস এয়ারে , আবার ভারতীয় এয়ারলাইন্সগুলো ভারতে ট্রানজিট দিয়েও নিয়ে যায়। বাজেট ও যখন যেটা সস্তা পান সে হিসেবে যেতে পারেন। আনুমানিক ভাড়া ৩৩-৩৩ থেকে শুরু করে ৪৫/৫০ এর মতোও হয়।
আমরা মুলত এয়ার ইন্ডিয়াতে চেন্নাই ট্রানজিট হয়ে গিয়েছিলাম আমাদের ৩৬ এর মতো পড়েছিলো আপ ডাউনে।আমাদের যাবার সময় ৪ ঘন্টা আর আসার সময় ১০ ঘন্টা ট্রানজিট ছিলো আবার শ্রীলংকান এয়ারগুলো সরাসরি যায় তাই ফী বেশি পড়ে ঢাকা টু শ্রীলংকা ৪-৫ ঘন্টার মতো সময় লাগে।তবে ফিটস এয়ারে সরাসরি যায় তুলনামুলক ভাড়া কম পড়ে এটাতে ট্রাই করতে পারেন।
এয়ারপোর্ট / ডলার কনভার্ট ও সিম ক্রয় :
শ্রীলংকান এয়ারপোর্ট ঢাকা এয়ারপোর্টের মতোই ছোট খাট। ইমিগ্রেশনে জিজ্ঞাসা করবে রিটার্ণ টিকেট আছে কিনা রিটার্ন টিকেট দেখাবেন বা এখান থেকে অন্য কোন দেশে যাবেন কিনা গেলে সেটার টিকেট দেখাবেন ,থাকার বিষয়ে বলবেন গিয়ে দেখে ডিসাইড করবেন। সহজ ইমিগ্রেশন।
ইমিগ্রেশন শেষ করে এক্সিট করার পথেই পেয়ে যাবেন সীম কার্ডের দোকান ,এসটিএল বা ডায়লগ যেকোন একটি নিয়ে নিতে পারেন আমরা ডায়লগ নিয়েছিলাম ভালো সার্ভিস পেয়েছি। ২০ জিবি ডাটা মেয়াদ ছিলো ১ মাস ১৪০০ শ্রীলংকান রুপি (বাংলাদেশী টাকায় ৫৮০ টাকা আসে) সস্তাই বলা যায় ।
যেহেতু সীম ও ইন্টারনেট চলে আসছে তাই আপনি কানেক্টেড হয়ে গিয়েছেন দুনিয়ার সাথে । শ্রীলংকাতে অনেক ট্যাক্সি সার্ভিস আপনাকে ডাকবে আপনি সেদিকে মন না দিয়েই উবার বা পিক মি নামের সার্ভিস নিতে পারেন দুইটা সেইম জিনিসই । আমরা উবারে কলম্বো সেট করে গাড়ী ডাকার ৫মিনিটের মধ্যে গাড়ী হাজির । এয়ারপোর্টে পিকমি / উবারের পিকআপ পয়েন্ট আছে যার কারণে খুব সহজে আপনি হ্যাসেল ফ্রি গাড়ীতে উঠে যেতে পারবেন। এয়ারপোর্টেই আপনি সকল ডলার শ্রীলংকান রুপিতে কনভার্ট করে নিতে পারবেন। এছাড়া শ্রীলংকার সব জায়গাতেই ডলার থেকে রুপি কনভার্ট করতে পারবেন তবে রেট আপ ডাউন হতে পারে কিছু ।মনে রাখবেন শ্রীলংকাতে টাকা বা ভারতীয় রুপি চলেনা, অনলি ডলার / শ্রীলংকান রুপিতে পে করতে পারবেন। এছাড়া যাদের ইন্টারন্যাশনাল কার্ড আছে তারা শ্রীলংকার মোটামুটি সব জায়গায় কার্ড ও ইউজ করতে পারবেন।
এক্সপ্রেস ওয়েতে করে আমরা ৪০ মিনিটের মধ্যে কলম্বো পৌছে যাই ,রাতে থেকে এরপরদিন আমাদের গন্তব্য ক্যান্ডি ,হোটেল থেকে পিক মি সার্ভিসের মাধ্যমে টুকটাক গাড়ী ডেকে নেই ,টুকটুক হলো বাংলাদেশের যে সিএনজি সেটাই শ্রীলংকাতে টুকটুক নাম তবে এগুলো চলে পেট্রোলে একটাতে ৩জন বসতে পারবেন। বাস স্ট্যান্ডে এসে এসি বাসের টিকেট করে নেই এগুলো সরাসরি ক্যান্ডিতে নামিয়ে দেয় জনপ্রতি নেয় ৮২০ রুপি (বাংলা টাকা হিসেবে ৩৫০ টাকার মতো আসে)
তিন ঘন্টার মতো সময় লেগেছে ,ক্যান্ডিতে নেমে আমরা কোথায় কোথায় যাবো জানিয়ে একটা টুকটুক ঠিক করে নেই। ক্যান্ডিতে আমরা ঘুরেছি মিলিনিয়াম পার্ক (হাতির পার্ক), বোটানিক্যাল গার্ডেন ,সানসেট ভিউ পয়েন্ট / মন্দির/ ক্যান্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়া।
বোটানিক্যাল গার্ডেন শুনে আবার এড়িয়ে যাবেন না এটা বিশাল ও সাজানো গোছানো ইউরোপ স্ট্যান্ডার্ট একটা গার্ডেন অবশ্যই যাবেন তবে টিকেট প্রাইস বেশি বিদেশীদের জন্য বাংলা টাকায় প্রায় ১২০০-১৩০০ পড়ে যায়।
যারা সিগরিয়া যাবে তারা প্রথমে কলম্বো সোজা সিগরিয়া চলে যাবেন বাস স্ট্যান্ড থেকে বাসে করে সিগরিয়া খুব সুন্দর জায়গা সিগরিয়া থেকে ক্যান্ডি আসবে।
সিগরিয়াতে ঘুরতে পারেন ১। পিদুরাঙ্গালা ২। সিগিরিয়া রক ৩। আশেপাশের গ্রাম ৪। কান্দালামা লেক- সিগিরিয়া থেকে একটু দূরে ৫। ডাম্বুল্লা কেভ টেম্পল। সিগরিয়া রক এখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত জায়গা।
সিগরিয়া ঘুরে টুকটুক বা বাসে আপনি চলে আসতে পারেন ক্যান্ডিতে তারপর ক্যান্ডিতে ঘুরে আপনি নুয়েরা এলিয়া চলে আসতে পারেন টুকটুক বাস বা ট্রেনে। ট্রেন জার্নি করতে পারেন ট্রেন জার্নি আপনাকে পুরাই অন্য লেভেলে অভিজ্ঞতা দিবে পাহাড়ের উপর দিয়ে ট্রেন রাস্তায় ভিন্ন মজা পাবেন আবার টুকটুকে আসলে রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে আসতে পারেন।
শ্রীলংকান ট্রেনের টিকেট কাটার লিংক চেষ্টা করবেন ট্যুরিস্ট ট্রেনগুলোর টিকেট কাটতে এগুলো যেমন ভালো মানের ট্রেন তেমনি সব ট্যুরিস্ট ভর্তি থাকে।
ইন্টারন্যাশনাল কার্ড দিয়ে নিজেই টিকেট কাটতে পারবেন। নুয়েরা এলিয়ার ট্রেন স্টেশন হইলো NANU OYA এইটা নুয়ারা এলিয়া শহর থেকে একটু দূরে। সবসময় বাস/টুকটুক পাওয়া যায়। এই এলাকাটা মুলত চা বাগানে ঘেরা একটা দার্জিলিং ফিলিংস পাবেন। এখানে ঘুরতে পারেন গ্রেগরি লেক /পোস্ট অফিস / ভিক্টোরিয়া পার্ক / লাভার্স লিপ ঝর্না /সিঙ্গেল ট্রি হিল / সিতা আম্মান কোভিল মন্দির/ মুন প্লেইন্স /আম্বেওয়ালা ফার্ম/ / স্ট্রবেরি ফার্ম/হর্টন প্লেইন্স ন্যাশনাল পার্ক
গুগল করে জায়গাগুলো দেখে নিজের মতো করে বাছাই করে নিতে পারেন
![]() |
ট্রেনগুলো এমন সব পাহাড় ও চা বাগানের মাঝে দিয়ে যায় সর্বোচ্চ ৬০০০ ফুট উচু দিয়ে ট্রেন যায়। |
নুয়েরা এলিয়া শেষ করে আসতে পারেন এল্লাতে, নুয়েরা এলিয়া থেকে এল্লা যাবেন ট্রেনে ,বাস জার্নি ভালো লাগবেনা ট্রেন সহজে পাবেন ও পাহাড়ী রাস্তায় ট্রেন যাবে চমৎকার অভিজ্ঞতা পাবেন। ২ -৩ ঘন্টা সর্বোচ্চ লাগবে।
এল্লাতে ট্রেনে এসে এল্লা নাইন আর্চ ব্রিজ, মিনি এডামস পিক ,রাবানা পুল ক্লাব , রাবানা ওয়াটার ফলস পাবেন এগুলো ঘুরতে পারেন একদিন যথেষ্ট এখানে ঘুরে দেখার জন্য । এখানে কিছু এডভেন্জার এক্টিভিটিস করতে পারবেন যেমন সুইং,জিপ লাইনিং ইত্যাদি করতে পারেন।
এল্লা মুল শহর থেকে ১ কিমি দুরে রাভানা পুল ক্লাব আছে এখানে সু্ইমিং পুল বার সহ তাবুতে থাকা অনেক কিছু পাবেন ।
এল্লা শেষ করে চলে যেতে পারেন মিরিশ্যা ,মিরিশ্যা হলো বীচ এরিয়া লম্বা বীচ এলাকা ,একেক সাইডের একেক রকম ভিউ একেক রকম আনন্দ । আমরা ছিলাম মুল মিরিশ্যা বীচে ,এখানে অধিকাংশ হোটেলই একদম বীচের সাথে মানে আপনার রুমের সামনেই পানি চলে আসবে । এক পা দিবেন হোটেল এক পা থাকবে বীচে এতটা ক্লোজ। মিরিশ্যা বীচে সময় কাটাবেন সাথে কোকনাট বীচ ও প্যারট রক ঘুরে দেখতে পারেন এগুলো বীচের সাথেই জাস্ট যেন ভুলে না যান বা মিস না করেন তাই ম্যানশন করে দিলাম। মিরিশ্যা বীচ এরিয়া বড় এলাকা এখানে সারফিং ও করতে পারবেন।
![]() |
মিরিশ্যা বীচের আমাদের হোটেলের ঠিক সামনে থেকে |
মিরিশ্যা বীচ শেষ করে আমাদের গন্তব্য হলো গালে , গালে হলো চমৎকার ঐতিহাসিক এক শহর। শহরের চারশপাশে বিশাল সমুদ্র এর ফোর্ট দিয়ে ঘেরা ভিতরে ঐতিহাসিক গালে ফোর্ট।
মিরিশ্যা থেকে গালে যাবার পথে আপনি চমৎকার সব সী বিচের দেখা পাবেন এগুলো দেখতে দেখতে গালে যাবেন ,পুরো রাস্তাটাই সমুদ্রের পাশ দিয়ে তাই এখানে অনেক জায়গায় আপনার থামতে মন চাইবে থামবেন ও ছবি তুলবেন। টুকটুক দিয়েই যেতে পারবেন ২৫-৩০ কিমি । টুকটুকই বেস্ট ঘুরে দেকার জন্য রাস্তায় দেখতে পারেন জঙ্গল বীচ ও টেম্পল একসাথে , সিক্রেট বীচ ,
unawatuna beach ইত্যাদি । এগুলো সব সী বীচ হলেও একেকটার একেক সৌন্দর্য্য মিস করবেন না কিন্তু।
আরেকটা কথা শ্রীলংকার একটা বিখ্যাত ছবি আছেনা যে সমুদ্রের মাঝে লাঠির উপরে বসে জেলেরা মাছ ধরে ,এটা মিরিশ্যাতে পাবেন টুকটুক ড্রাইভারকে ছবি দেখালে নিয়ে যাবে এটাকে বলে
![]() |
Stilt fishing মিরিশ্যা শ্রীলংকা |
গল সিটিটা ঘুরে দেখতে পারেন এটা পুরোটাই সুন্দর একটা সিটি । মিউজিয়াম / বাতিঘর /স্টেডিয়াম দেখতে পারেন। আর গল ফোর্ট সিটিটা আপনার মন জয় করে নিবে নিশ্চিত থাকুন।
গল ঘুরে গল থেকে ট্রেনে চলে আসতে পারেন কলম্বোতে , এই রাস্তাটাও খুব সুন্দর কারণ কলম্বোর কাছে এসে ট্রেনটা একদম সমুদ্রের পাশ দিয়ে যায় যেটা আপনাকে অন্য একটা ফিলিংস দিবে।
কলম্বোতে অনেক জায়গা আছে ঘুরে দেখার যেমন লোটাস টেম্পল , ইন্ডিপেন্ডন্স স্কয়ার ,গঙ্গারামায়া টেম্পল সিমা মালাকায়া / ন্যাশনাল মিউজিয়াম / রেড স্কয়ার / গালে ফেইস গ্রিন / নিউ পোর্ট ।
প্লেসগুলোতে ঘুরতে টুকটুক বা উবার ইউজ করতে পারেন।
![]() |
কলম্বোর গালে ফেইস গ্রিন এখানে নিউ পোর্টও পাশেই তাই এখানে বিকালে ভালো লাগবে |
1 comments:
Thank You Vai for details blog.
Post a Comment