ভ্রমণে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে যেসব ঔষধ খাবেন এবং আরও কিছু প্রয়োজনীয় সতর্কতা


আমরা হরহামেশা পাহাড়ি এলাকা যেমন বান্দরবন ,রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি ঘুরতে যাই ,এসব এলাকা নানা সময়ে ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকা হিসেবে আত্নপ্রকাশ ঘটে । বিশেষ করে বান্দরবনের গহীন যেসব ট্যুরিস্ট স্পটগুলো রয়েছে সেগুলোতে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে । কিন্তু তারপরও মানুষ ভ্রমণের নেশায় ঝুঁকি নিয়েও সেসব স্পটগুলোতে যায় । 




মানুষকে আটকোনা যাবেনো এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আমরা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করতে পারি । ম্যালেরিয়া ভয়ংকর রোগ হেলাফেলা করার মতো নয় । অনেকে ভাবেন ধুর কি আর হবে ....ধুর আমার এসব হয়না । এসব ধারণা বা এসব মেন্টালিটি ভয়ংকর । সাহসী হওয়া ভালো কিন্তু পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে হওয়া ভালো ,জ্ঞানহীন মুর্খ সাহসীকতা কখনোই ভালোনা । 

এই লেখাটি আমি যখন লিখছি তার আগের রাতেই বান্দরবন থেকে দশদিন আগে ফেরত ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে এক ছোট ভাই মারা গিয়েছি ,সেও কোন ঔষধ খায়নি বা সতর্কতা অবলম্বন করেনি । আমি চাইনা আর একটি প্রাণও এভাবে ঝরে যাক অকালে :( 

সামান্য কিছু সতর্কতা আর ঔষধ আপনার ভ্রমণকে করতে পারে ম্যালেরিয়া থেকে নিরাপদ এবং ভয়হীন । 

যাই হোক এবার আসুন ঔষধের ব্যাপারে :

দুইটি ঔষধ যা বর্তমানে সবচেয়ে কার্যকর ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে সে সম্পর্কে আজকে আলোচনা করবো 

  • Cap Doxycycline 100 mg - এটি ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে বেশ ভালো কাজ দেয় ,খোজ করলে সহজেই যেকোন ফার্মেসীতে পাবেন । এটি খাওয়া নিয়ম হলো ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকাতে যাবার ২/১দিন আগে থেকে রাতের খাবার খাওয়ার পর প্রতিরাতে একটি করে খাওয়া শুরু করবেন এবং ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকাতে থাকার দিনগুলোতেও রাতের খাবার খেয়ে প্রতিদিন একটি ক্যাপসুল খাবেন । এখানেই শেষ নয় ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকা বা ট্যুর থেকে ফিরে আসার টানা ২৮ দিন পর্যন্ত প্রতি রাতে খাবার খাওয়ার পর একটি করে ঔষধ খাবেন । এটি একটি সম্পূর্ন প্যাকেজ তাই এটি সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করলেই তবেই আপনি ম্যালেরিয়া থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ :) 
উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেই , ধরুন আপনি ট্যুরে যাবেন ৫ তারিখে তাহরে ৩/৪ তারিখ থেকে ঔষধটি খাওয়া শুরু করবেন ট্যুরে আপনি ছিলেন ৮ তারিখ পর্যন্ত তাহলে ট্যুরে নিয়মিত ঔষধতো খাবেনই এবং আট তারিখের পরে টানা চার সপ্তাহ মানে ২৮ দিনও ঔষধটি নিয়মিত খেতে হবে । 

এই ঔষধটি সহজলভ্য এক পাতা ২০-২৫ টাকা , তেমন সাইড ইফেক্ট না থাকলেও মাঝে মাঝে বুমি বুমি ভাব এছাড়া হালকা পেটে ব্যাথা হতে পারে সুতরাং ভয়ের কিছু নেই :) 

  • Tab Malarone (Adult Strength 250mg atovaquine+100mg Proguanil hydrocloride ) এটির কোর্স তুলনামুলক ছোট ,ট্যুর শুরুর একদিন আগে থেকে খাওয়া শুরু করে ট্যুরে যতদিন থাকবেন ততদিন এবং ট্যুর থেকে ফেরার সাতদিন পর্যন্ত রাতের বেলা ভরাপেটে খাবেন :) তবে এই ঔষধটি কিছু বড় ফার্মেসী ছাড়া তেমন পাওয়া যায়না । আর দামটাও বেশি এক পাতা ১২টির দাম ১০০০-১৫০০ । 

এই দুইটি ঔষধ ছাড়াও বাস্তবিকে আরও কিছু জ্ঞান আপনার রাখতে হবে 
  • যে পাবর্ত্য এরিয়াতে যাবেন সে এরিয়া আদৌ ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকা কিনা সেটা ভালো করে খোজ নিয়ে যাবেন যেমন ধরুন সাজেক পার্বত্য এরিয়া কিন্তু সাজেকে ম্যালেরিয়ার প্রবণতা একদমই নেই তাই ওখানে ঔষধ খাবার প্রয়োজনও নেই :) 
  • ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকা না হলেও বা সন্দেহ থাকলে ওডোমসও ব্যবহার করতে পারেন । 
  • পার্বত্য এলাকা থেকে ফেরার পর এক দেড় মাসের মধ্যেও যদি কাঁপুনি দিয়ে জ্বর বা  একটু অস্বাভাবিক তাপমাত্রায়  জ্বর আসলে সাথে সাথেই অভিজ্ঞ ডাক্তার ( যারা ম্যালেরিয়া নিয়ে কাজ করে)এর কাছে যাওয়া ও ম্যালেরিয়া টেস্ট করা দরকার। তবে আই সি ডি ডি আর বি বা সি এম এইচ এর টেস্ট ভাল হবে। কারন উনারা ম্যালেরিয়া নিয়ে কাজ করে ।  ।টেস্ট করার সময় অবশ্যই জিজ্ঞাস করে নিবেন"প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপ্যারাম ও প্লাজমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স" যাতে আলাদা করে দেখায়। যেন আমার মত সমস্যায় না পড়তে হয় (এই অংশটি নিজাম ভাইয়ের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা)
  • মশারি টানিয়ে ঘুমানো এবং যতটা সম্ভব হাত পা কভার করে এমন ফুল হাতা গেন্জি /ট্রাউজার বা প্যান্ট পরা । 

সর্বশেষে সাম্প্রতিক একটি ম্যালেরিয়া বিষয়ক সেমিনার থেকে লব্ধ জ্ঞান থেকে একটা কথা বলি অনেকে বছরে পাচ ছয় বার বা তার বেশি প্রাবর্ত্য এরিয়া যেমন বান্দরবন যান তাহলে কি তিনি শুধু ঔষধ খেতেই থাকবেন খেতেই থাকবেন ? এক্ষেত্রে সাইড ইফেক্ট বা অন্য সমস্যার ব্যাপারগুলো কি হবে ? এর উত্তরে জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের প্রধান যে উত্তরটি দিয়েছিলেন যে ঔষধ খেতে হবে সেটা জরুরী নয় জরুরী হলো সচেতনতা যেমন ভ্রমণ থেকে আসার পর এক দেড় মাসের ভিতরেও যদি কাপুনি দিয়ে জ্বর বা অতি জ্বর আসে সাথে সাথে ম্যালেরিয়ার টেস্ট করাবেন কোন অবহেলা করা যাবেনা সেক্ষেত্রে ঔষধের চেয়ে সচেতনতাটা সবচেয়ে জরুরী তাহলে ম্যালেরিয়া ধরা পড়লে আর্লি স্টেজেই সাড়ানো যাবে :) 


সর্বশেষ একটা কথাই বলি বাহাদুরি ভালো সাহসীকতা ভালো কিন্তু সেটা যেন অসতর্কতায় জীবননাশের কারণ না হয় ,জ্ঞানহীন সাহসিকতা ভালোনা । এক্সপ্লোর করুন ঘুরুন দেশ বিদেশ সবখানে কিন্তু পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যাপারটাও মাথায় রাখবেন । মনে রাখবেন একটি ভুল আপনার জীবন শেষ করে দিতে পারে :) 

ডাক্তারি ঔষধগুলোর পরামর্শ দিয়েছেন মাজহারুল জিওন ভাই :) 


আরও কোন পরামর্শের প্রয়োজন হলে আমাকে ফেইসবুকে নক দিতে পারেন  এছাড়া আমার ভ্রমণ গ্রুপ স্বপ্নযাত্রার ফেইসবুক গ্রুপে  যুক্ত হয়ে থাকতে পারেন দেশ বিদেশের ভ্রমণ নিউজ এবং দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর জন্য :) 



0 comments:

Post a Comment

লেখাটি শেয়ার করুন