নাম তাহার দামতুয়া ঝর্ণা ( বিস্তারিত ব্লগ)

পাহাড়কে প্রকৃতি তার খেয়াল খুশিমতো অপরুপ সৌন্দর্য্যে সাজিয়েছে :) কখনো উঁচু কখনো নিচু হঠাৎ করে আবার পানির কলতান কোথাও আবার সৃষ্টি হয়েছে অপরুপ সৌন্দর্য্যের ঝর্ণা :) তেমনই এক ঝর্ণা হলো দামতুয়া ঝর্ণা এর অবশ্য আরও বেশ কিছু নাম আছে যেমন তুক অ / লামোনই ঝর্ণা :)
ছবি : ইমরান হোসাইন 
দামতুয়া ঝর্ণা যখন আপনার নামটি শুনবেন নিশ্চয় প্রথমে মনে আসবে এটি কোথায় অবস্হিত ? দামতুয়া ঝর্ণাটি আসলে বান্দরবনের আলীকদম উপজেলায় অবস্হিত । কিন্তু বান্দরবনের আলীকদম হলেও আপনি বান্দরবন শহর হয়ে যাবেন না, যেতে হবে আপনাকে চিটাগাং টু কক্সবাজার রুট হয়ে :) কারণ হলো আলীকদম কক্সবাজার এর কাছেই অবস্হিত সেজন্য যোগাযোগ ব্যবস্হার সুবিধার কারণে ঢাকা টু আলীকদম ডাইরেক্ট বাস যায় চট্রগ্রাম হয়ে চকরিয়া হয়ে আলীকদম :)

যদি আপনি কোন কারণে বান্দরবন দিয়ে যেতে চান তাহলে প্রথমে ঢাকা টু বান্দরবন যেতে হবে সেখান থেকে থানচি যাবেন তারপর থানচি থেকে মটরসাইকেল বা চান্দের গাড়ীতে থানচি টু আলীকদম ৩২ কিমি রোড পাড়ি দিয়ে আলীকদম পৌছাবেন :) এক্ষেত্রে যদি আপনি থানচির দিকে কোন ঝর্ণা দেখতে যান সেটার সাথে মিলিয়ে দামতুয়া দেখতে পারেন :)

নিশ্চয় বুঝে গেছেন ঢাকা থেকে সরাসরি চকরিয়া বা আলীকদমের বাসে রাতে উঠলেই ভোরে আলীকদম নামিয়ে দিবে । ঢাকা থেকে সরাসরি যায় হানিফ এবং শ্যামলী একদম আলীকদম নামিয়ে দিবে । এছাড়া ইউনিক সহ যতগুলো বাস কক্সবাজার যায় সবগুলো বাসই চকরিয়াতে থামে সো চকরিয়ার বাসেই উঠতে পারেন । সকালে চকরিয়া নেমে ১ ঘন্টার রাস্তা চান্দের গাড়ীতে আলীকদম নামিয়ে দিবে :)

কোন এক অদ্ভূত কারণে চকরিয়ার বাস নয়টার মধ্যেই ছাড়লেও চকরিয়া থেকে ৪০ কিমি দুরে আলীকদমের বাসগুলো ছাড়ে রাত এগারোটায় । এর কারণে আমার কাছে এখনো বোধগম্য নয় আলীকদম যেহেতু দুরে সেহেতু আলীকদমের বাস আগে ছাড়ার কথা তাইনা ?

যাই হোক আমার পরামর্শ হলো দামতুয়া যেহেতু একদিনেই দেখে ঢাকা ফেরত আসা যায় তাই চকরিয়া বাসে উঠাই ভালো যেগুলো আটটা থেকে নয়টার মধ্যেই ছেড়ে যায় তাহলে ভোরে ভোরে চকরিয়া নেমে আলীকদম পৌছানো যাবে তাহলে সারাদিনের সময়টা কাজে লাগানো যায়। অপরদিকে আলিকদমের ডাইরেক্ট বাসগুলো পৌছাতে আটটা নয়টা বেজে যায় ।

আলীকদম পর্যন্ত ৮৫০ টাকা ভাড়া নিবে আর চকরিয়া পর্যন্ত ৭৫০ টাকা ভাড়া :) যদি চকরিয়া পর্যন্ত যান তাহলে সেখান থেকে প্রতিজন ৭০ টাকা করে চান্দের গাড়ীতে আলীকদম পর্যন্ত আসতে হবে । সময় লাগবে এক ঘন্টার মতো সর্বোচ্চ ।

আলীকদম পৌছে আপনাকে চান্দের গাড়ী বা মটরসাইকেল রিজার্ভ ভাড়া করতে হবে । এখানে মটরসাইকেলের আধিপত্যই বেশি বাস কাউন্টারে নামলেই মটরসাইকেল পাবেন । মটরসাইকেলে আপনাকে যেতে হবে আলীকদম থেকে ১৭ কিমি দুরে অবস্হিত ১৭ কিলো নামক জায়গায় । মজার না নামটা ? ১৭ কিমি দুরের জায়গার নাম ১৭ কিলো :)

মটরসাইকেলে /চান্দের গাড়ীতে ১৭ কিলো যাবার সময় ১০ কিমি দুরে ১০ কিলো নামক জায়গায় হলো আর্মির ক্যাম্প এখানে সবাইকে ন্যাশনাল আইডি কার্ড অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি অথবা স্কুল কলেজ অফিসের আই্ডি কার্ড যেকোন একটির ফটোকপি জমা দিতে হয় । ফটোকপি না আনলে আর্মি যেতে দেয়না সুতরাং এ ব্যাপারে সবাই সাবধান থাকবেন ।

আলীকদম থেকে ১৭ কিলো রাস্তাটা অসাধারণ এই রাস্তাটিই থানচি পর্যন্ত গিয়েছে :) মটরসাইকেল রাইডটা অবশ্যই উপভোগ করবেন :)  যাই হোক মটরসাইকেলে ড্রাইভার সহ তিনজন বসতে হয় ওরা ১৭ কিলো নামক জায়গায় নামিয়ে দিয়ে আসবে তারপর ঝর্ণা দেখে ফেরার পর আবার নিয়ে আসবে অর্থাৎ আসা যাওয়া মিলিয়ে ৬০০-৭০০ টাকা নিবে প্রতিটি মটরসাইকেল । মানে প্রতিজন পড়লো ৩০০-৩৫০ টাকা :) বুঝা গেছে ব্যাপারটা :)
স্বপ্নযাত্রার টিম ট্রেকিং শুরু করে দিয়েছে দামতুয়ার দিকে 

১৭ কিলো থেকেই আপনাকে ট্রেকিং শুরু করতে হবে , যারা পাহাড়ে যান তারা অবশ্যই জানেন কিছু ট্রেকিং রুট থাকে পাহাড় আর ঝিরি রাস্তা মিলিয়ে কিছু থাকে অধিকাংশ ঝিরি আর কিছু থাকে অধিকাংশই পাহাড় । দামতুয়া ট্রেইলটা হলো পাহাড় বেশি ঝিরির দেখা খুবই কম পাবেন পাহাড়ে পাহাড়ে হাটতে হবে বেশি সেজন্য তুলনামুলক কঠিন ট্রেইল এটি :( সেজন্য এ বিষয়টা মাথায় রাখবেন । ঝর্ণাতে পৌছাতে প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘন্টার ট্রেইল এটি । আসতে যেতে প্রায় ছয় ঘন্টা লেগে যাবে । তবে আবহাওয়া একটু অনুকুলে থাকলে হয়তো কম সময় লাগতে পারে ।।

যাই হোক ঝর্ণার ঠিক ৫ মিনিট আগে এই ব্যাঙ্গ ঝিরিটি পাবেন আমি  অনেককেই দেখেছি এটা ক্রস করে সামনে চলে যায় এই ভুল করবেন না এটি চমৎকার একটি কেসকেইড এটিতে সময় কাটালে ভালো লাগবে :)
দামতুয়া ঝর্ণার ঠিক আগেই এই ঝিরিটি পাবেন এটিতে সময় কাটাতে পারেন ..ভালো লাগবেই :) 


যাই হোক একটু পরেই চোখের সামনে পাবেন দামতুয়া ঝর্ণাটি ,বর্ষা সিজনে এই ঝর্ণা বেশ সুন্দর ভাবে নিজেকে তুল ধরে সবার সামনে । তাই বর্ষা ছাড়া অন্যসময় গিয়ে তেমন একটা ভালো নাও লাগতে পারে খেয়াল রাখবেন যখন যাচ্ছেন তখন যেন বর্ষা থাকে :)

মনের আয়েশ মিটিয়ে সময় কাটিয়ে আবারও ফিরে আসুন ১৭ কিলো নামক জায়গায় আগের মটরসাইকেল ওয়ালাদের কাছাকাছি এসে ফোন দিলেই ওরা এসে নিয়ে যাবে :)

অনেক কথাই বললাম এবার ছোট্র করে প্রয়োজনীয় কিছু টিপস দিয়ে দেই


  • ১৭ কিলো তেই গাইড পাবেন এখানে তিন চারটা দোকান আছে দোকানেই গাইড বসে থাকে গাইড ৫০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত নিবে দাম দর করে যত কমে নিতে পারেন । ১৭ কিলোর দোকান পাট থেকে পানি বিস্কিট ও প্রয়োজনীয় খাবার দাবার কিনে নিতে পারেন :) তবে ঝর্ণার ঠিক আগের পাড়াতে ছোট্র একটা দোকান আছে ওখানেও হালকা বিস্কিট ,পানি ও কলা পাবেন । 
  • আলীকদমে ৫/৬জন থাকার মতো হয়তো খুবই সাধারণ হোটেল পেতে পারেন তবে যদি কেউ থাকতে চান তাহলে চকরিয়াতে হোটেল আছে এখানে থাকতে পারবেন :) 
  • ঝর্ণা পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ের উপরে উঠলেই নেটওয়ার্ক পাবেন তবে রবি/এয়ারটেল সিমের নেটওয়ার্ক ভালো থাকে ।
  • দুপুরে যেহেতু খাবারের কোন অপশন ওখানে নাই তাই ভালো করে বিস্কিট পানি চকলেট এসব নিয়ে যাবেন আর আলীকদমের কোন হোটেলের নাম্বার নিয়ে যাবেন যেন ফোন দিলেই খাবার প্রস্তুত করে রাখে । কারণ বিকেল বা সন্ধ্যা নাগাদ যখন ঝর্ণা থেকে ফিরবেন তখন সবারই প্রচুর ক্ষিধে থাকে সেক্ষেত্রে আলীকদমের অধিকাংশ হোটেলেই আগে থেকে না বললে খাবার পেতে কষ্ট হতে পারে । 
  • একদিনের ট্যুরেই ঢাকা থেকে গিয়ে এটি দেখে আসতে পারবেন তবে স্মরণ রাখবেন ঢাকা থেকে আগের রাতে যেন যত দ্রুত রওয়ানা হতে পারেন তত ভালো এমনভাবে বাসের টাইমিং ধরবেন যেন ভোরে গিয়ে নামায় সেক্ষেত্রে অনেক বেশি সময় পাওয়া যায় এবং রিল্যাক্সভাবে ট্যুরটি শেষ করা যায় :)


    এখনো যদি কিছু জানার থাকে তাহলে আমাকে নক দিতে পারেন ফেইসবুকে 

    এছাড়া দেশ বিদেশে কম খরচে ট্যুর করতে পারেন আমাদের স্বপ্নযাত্রা ট্রাভেল গ্রুপের সাথে । যোগ দিতে পারেন আমাদের ফেইসবুক পেইজে 





0 comments:

Post a Comment

লেখাটি শেয়ার করুন